গাইবান্ধায় কৃষকের কপাল পুড়ছে ইটভাটা

  28-04-2017 05:45PM

পিএনএস, গাইবান্ধা প্রতিনিধি : বর্গাচাষী মো.মশিউর রহমানের (৬৪) কপাল পুড়ছে ইটের ভাটা। তিনি জানান, ৩ শতক বাড়ির ভিটা ছাড়া তার জমি-জমা নেই। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে চারজন। তিনি বছর ভরে ঘরের ধানের ভাত খাবেন, এ আশায় বুক বেঁধে প্রতিবেশি মোস্তাফিজুর রহমানের নিকট থেকে দুই বিঘা জমি বর্গা নেন। তাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষ করেন বোরো ধান। কিন্তু তার এ আশা আর পূরণ হলো না।

তিনি এর কারণ হিসেবে জানান,আবাদি জমির পাশে স্থাপন করা ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ক্ষেতের ধান গাছের শীষসহ পাতা পুড়ে লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ক্ষেতের পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ধান গাছ মরে গেছে। এখন দুই বিঘা জমি মিলে ২০ মণ পাবেন হবে কি না, এ নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছেন বর্গাচাষী মশিউর রহমান। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের নশরৎপুর গ্রামে।

ওই গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমানের (৬০) সাথে। তিনি জানান, একই ইউনিয়নের থানসিংপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন ওরফে ফেলুর ছেলে আনারুল ইসলাম (৪৫) প্রায় ৬ বছর পূর্বে নশরৎপুরের গণউন্নয়ন কেন্দ্র এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করছেন। সেই থেকেই ইটভাটা এলাকার কমপক্ষে ৩০ একর জমির কোন ফসল ভাল ভাবে হচ্ছেনা। তিনি আরো জানান, ভাটায় ইট পোড়ানোর বিষাক্ত ধোয়ায় একদিকে যেমন ক্ষেতের ফসল নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে।

একই গ্রামের কৃষক শাহীন সরকার (৩৫) জানান, ইটভাটার চিমনির উচ্চতা একেবারেই না থাকায় সহজেই ইট পোড়ানোর বিষাক্ত ধোঁয়া ফসলের উপর প্রভাব ফেলছে। শুধু তাই নয়, আম, জাম, কাঠাঁল, লেচু ও নারিকেল গাছে পঁচে ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে। ইটভাটা স্থাপনের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ ৬ বছরে বাড়ির গাছের ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা। সবুজ মিয়া (৩০) নামে আরেক কৃষক জানান,বাড়ির জলপাই ও কামরাঙ্গার গাছ ইট পোড়ানোর বিষাক্ত গ্যাসে মরে গেছে। গাছের আম ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফল-ফলান্তি পঁচে ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা মমতাজ উদ্দিন (৯০) জানান, প্রায় অর্ধযুগ ধরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসল উৎপাদন বিপর্যয় ঘটায় এলাকার মানুষ অভাব-অনটনে পড়েছে। তিনি কৃষকদের ক্ষতিপুরন সহ ইউভাটার মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। ইটভাটার মালিক আনারুল ইসলাম জানান, তিনি নিয়ম মাফিক ভাটায় ইট পোড়াচ্ছেন। তারপরও যাতে করে কারো কোন ক্ষতি না হয় সে ব্যবস্থা করবেন।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মো.রুহুল আমিন জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। ইটভাটার কারনে এমনটা হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তবে আবাসিক এলাকায় ইট পোড়ানো ঠিক নয়। এতে জনস্বাস্থ্য হুমকীর সম্মুখীনসহ বিশেষ করে ওই এলাকায় ২৮ ও ২৯ জাতের বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।


পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন