চিরিরবন্দরে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বাল্যবিবাহ

  18-05-2017 01:14PM

পিএনএস, দিনাজপুর: দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় প্রশাসনের অসহায়ত্বের সুযোগে বাল্যবিবাহের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠানের খবর দেওয়া হলেও প্রশাসন মোবাইল কোর্ট বিধান বাতিলের অভিযোগ তুলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বিবাহ বন্ধে কোন হস্তক্ষেপ করেনি। গত এক সপ্তাহে উপজেলায় অন্তত ৯টিরও বেশি বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয়েছে গত ১২ মে শুক্রবার। ওইদিন সন্ধায় উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের জয়পুর পূর্বপাড়া গ্রামের মজিবর রহমানের মেয়ে জয়পুর ফাতেহ্ আলী সিনিয়র মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণির ছাত্রী মমিনা খাতুনের (১৪) বিবাহ হয় আব্দুরপুর ইউনিয়নের হযরতপুর কবিরাহপাড়ায় তার ভগ্নিপতি মানিক হোসেনের বাড়িতে।

এ বাল্যবিবাহটি বন্ধ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. গোরাম রব্বানী মহামান্য হাইকোর্টের মোবাইল কোর্ট বিধান বাতিলের রায় জানিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। ওইদিন নান্দেড়াই নয়াপাড়ায় আক্কাস আলীর মেয়ে অব্দুরপুর নান্দেড়াই মোহসেনা চৌধুরানী দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী আমিনা খাতুন(১৪), পাশ্ববর্তী এলাকার জিকরুল হকের মেয়ে ও ওই মাদ্রাসার ৮ম ম্রেণির ছাত্রী জাকিয়া খাতুন(১৪), আব্দুলপুর হাজীপাড়ার আব্দুল নুরের চেলে মোফাসিরুলের সাথে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী মৌসুমি আক্তার সুমা(১৫)’র সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে, এদিকে, চিরিরবন্দর মহিলা কলেজের একাদশ ১ম বর্ষের ছাত্রী মো. তহমিনা খাতুন (১৭), একই কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থী মারমিন আকতার (১৭), বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য এসএসসি পাশকৃত চাত্রী শরিফা আকতার (১৬), রুবিনা আকতারেরও (১৭), বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের নিকট মুচলেকা দেওয়া সত্ত্বেও মামুদপুর দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেনির ছাত্রী নুরজাহান আক্তার, পুরান বিন্যাকুড়ি আলিম মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণির চাত্রী মল্লিকা আক্তার মিমি (১৫)’র স্থানীয় মৌলভী দ্বারা বিবাহ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মহামান্য হাইকোর্ট মোবাইল আইন বাতিল ঘোষনা করায় এক শ্রেণির সুযোগে সন্ধানী ঘটক ও ব্যক্তি দ্রুত তা প্রচার করে বিয়ের যাবতীয় প্রস্তুতি ও বিবাহ সম্পন্ন করতে আদাজল খেয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিছু অসচেতন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকারই মেয়েদের বিবাহরে বয়স ১৬ভছর নির্ধারণ করেছে। তবে বিয়ে দিলে দোষ কিসের ? নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নিকাহ রেজিষ্ট্রার জানান, আইনের বাঁধায় বাল্যবিবাহ নিবন্ধন না করলেও বাল্যবিবাহ বন্ধ হচ্ছে না। এক শ্রেণির ঈমাম ও পুরোহিত ধর্মমতে বিবাহ পড়িয়ে চলেছেন। তাতে তারা (নিকাহ রেজিষ্ট্রাররা) জনরোষে পতিত হচ্ছেন।

সরকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাশফাকুর রহমান জানান, সমাজ ও রাষ্ট্রের কিছু জরুরি প্রয়োজনে ও বাল্যবিবাহ রোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ এবং মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট জরুরি হয়ে পড়ে। তাছাড়া ভেজাল বিরোধী অভিযান, প্রতারণামূলক কার্যক্রম, পরিমাপে কম দেওয়া, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণসহ জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল কোট কার্যকর ভূমিকা রাখে।

বাল্যবিবাহরে হিড়িক প্রসঙ্গে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান জানান, খবর পেলেই প্রশাসন বালবিবাহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ্য নিচ্ছে। গোপনে কোন বিয়ের সুস্পট প্রমাণদি পেলে বিয়ের পরও মামলা দায়ের করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. গোলাম রব্বানী জানান, মহামান্য হাইকোর্ট মোবাইল কোর্ট বাতিল করায় ওই সময় কিছু করার ছিল না।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন