শেরপুরে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়, অচল শতশত কলকারখানা

  22-05-2017 08:06PM

পিএনএস, শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা : বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বিদ্যুতের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে বিদ্যুতের যখন তখন আসা যাওয়া এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গেল এক সপ্তাহধরে বিদ্যুতের আসা যাওয়ায় নাকাল হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার গ্রাহক। এমনকি বিদ্যুতের ভেল্কিবাজীতে শহরবাসিও অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় দিনে-রাতের অধিকাংশ সময়জুড়ে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় বাণিজ্যিক এলাকাখ্যাত শতশত কল-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহৃত হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় পিডিবি’র আওতায় প্রায় ৩১হাজার গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে অটোমেটিক রাইচ মিল, সেমি অটোমিল, রাইচ মিল, ছোট ও মাঝারি শিল্প কলকারখানা ও বাসা বাড়ি অন্যতম। এদিকে বাসা বাড়িসহ এসব প্রতিষ্ঠানে একযোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে গেলে ন্যূনতম ১৬থেকে ২০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ শেরপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রয়োজন হয়। অথচ সেখানে মাত্র ৬-৮মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে বলে সুত্রটির দাবি। অন্যদিকে একেবারে নড়বড়ে সিস্টেমে চলছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে সামান্য বৃষ্টি আর হালকা বাতাসেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বিদ্যুতের দুর্বল খুটি ভেঙে পড়ে এবং তার ছিড়ে যায়। র্দীঘ সময় মেরামত কাজ শেষে আবার তা চালু হয়। এতে করেও ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। ফলে প্রায়দিনই গ্রাহকদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় গ্রাহকদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গোলাম রব্বানী, জামাল সেখ, আব্দুল সালামসহ একাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহক জানান, গেল এক সপ্তাহ ধরে লোডশেডিংয়ের নামে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজী শুরু হয়েছে। দিনে রাতে অন্তত ২০-৩০বার বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করে। বিশেষ করে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিদ্যুত আসা যাওয়া করছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করা হলে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানায় এলডিসি (লোড ডিসপাস সেন্টার) কাটা হয়েছে। তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে তাদের কিছুই করার নেই। সাধুবাড়ী যমুনা সেমি অটো রাইচ মিলের সত্ত্বাধিকারী আইয়ুব আলী বলেন, যখন তখন বিদ্যুতের আসা যাওয়ায় তাদের উৎপাদন কাজে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।

এ অবস্থায় উপজেলার সব কল-কারখানাগুলোই প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, দ্রুত বিদ্যুৎ অবস্থার উন্নতি না হলে চাল উৎপাদনে ধস নামবে। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা পথে বসবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে পৌরশহর এলাকায় কিছুটা সময়ে বিদ্যুত মিললেও গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও ভয়াবহ। উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উচুলবাড়িয়া গ্রামের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক মোফাজ্জল হোসেন, বাঁশবাড়িয়ার আব্দুল সালাম, বেলঘরিয়া গ্রামের আজিজার রহমান জানান, দিনে-রাতের ২৪ঘন্টার মধ্যে মাত্র ৪থেকে ৫ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে। বাকি সময়ে বিদ্যুতে দেখা পাওয়া যায় না। ঘন্টার ঘন্টার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় নাকাল পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহকরা।

এছাড়া রাতের বেলায় ঘনঘন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে চুরির ঘটনা বেড়ে যায়। ফলে ওই সময় বাড়ির লোকজনকে রাত জেগে নিজ সম্পদ পাহাড়া দিতে হচ্ছে বলে তারা জানান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ কবির সম্প্রতি বিদ্যুতের খারাপ অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুত সরবরাহ কম পাওয়া যাচ্ছে। তাই এই উপজেলার মোট ৫টি ফিডারের মধ্যেসর্বোচ্চ ২টি ফিডার চালু রাখা সম্ভব হয়। তখন স্থানীয়ভাবে ১ঘন্টা করে লোডশেডিং করা থাকে। ওইসময় কিছু এলাকায় এক ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলেও বিপরীত এলাকায় ঠিক ওই পরিমান সময় বিদ্যুৎ থাকে না।

এছাড়া সরাসরি ঢাকা থেকেও বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাই এলডিসি কেটে দেওয়ার কারণে এবং বগুড়া থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই এই অবস্থার উন্নতি হবে বলে এই কর্মকর্তা দাবি করেন। এদিকে এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে পল্লী বিদ্যুতের শেরপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক আল আমিন চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন