এ কেমন বর্বরতা!

  24-05-2017 09:26PM

পিএনএস ডেস্ক : নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে যৌতুকের টাকা না পেয়ে সাকিয়া আক্তার (৩২) নামে এক গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে বর্বর নির্যাতন করেছে তাঁর পাষণ্ড স্বামী। এমনকি ওই নারীর কানের দুল ও পয়সা দিয়ে তাঁর গোপনাঙ্গে জখম করা হয়েছে।

আজ বুধবার বিকেলে গুরুতর অবস্থায় সাকিয়াকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলার বড়তলী গ্রামে গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর সাকিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমান (৩৮) পলাতক। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ।

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফকরুল হাসান বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বলেন, সাকিয়ার জীবনের ঝুঁকি কেটে গেছে। তবে তাঁর গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে।

ওই হাসপাতালের কর্মরত দুজন সেবিকা শিরিন আক্তার ও স্বপ্না আক্তার বলেন, নির্যাতিত গৃহবধূর গোপনাঙ্গ থেকে একটি এক টাকার কয়েন ও চেপ্টা আকৃতির কানের দোল বের করা হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাকিয়া বলেন, ‘আমার স্বামী মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে টানা চার ঘণ্টা আমার ওপর নির্যাতন চালান। আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারেন ও রড দিয়ে পেটান। পরে হাত-পা বেঁধে হত্যা করার জন্য আমার বুকের ওপর উঠে পা দিয়ে পাড়ান, মুখে বালিশ চাপা দেন, গলায় রশি লাগিয়ে টান দেন। এক সময় আমার কানের দোল খুলে তা দিয়ে ও পয়সা দিয়ে গোপনাঙ্গে খোঁচাতে থাকে। আমার চিৎকারে ভাশুর নুরুল হক ও স্থানীয়রা ঘরের দরজা ভেঙে আমাকে উদ্ধার করেন।’ এসব কথা বলতে গিয়ে সাকিয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সাকিয়ার ভাই শাকিল মিয়া বলেন, তাদের বাড়ি একই উপজেলার পেরিরচর গ্রামে। ২০০৬ সালে বড়তলীর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাকিয়ার বিয়ে হয়। তাঁদের তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের এক বছর পর থেকেই জিয়াউর মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। এর পর থেকে সাকিনাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করে। এ নিয়ে পাঁচবারের মতো গ্রাম্য সালিসও হয়েছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

শাকিল মিয়া আরও বলেন, বোনের সুখের জন্য মাঝে মাঝে টাকা দেওয়া হয়। গত ডিসেম্বর মাসেও ৫০ হাজার টাকা দেই। গত ১৫ দিন ধরে আরও দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। টাকা দিতে অস্বীকার করায় সাকিয়ার ওপর এমন বর্বর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে।

জিয়াউরের বড় ভাই নুরুল হক বলেন, আমার ছোট ভাই নেশাগ্রস্ত। ইয়াবা খেয়ে প্রায়ই তাঁর স্ত্রীর ওপর অমানসিক নির্যাতন করে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে লোকজন নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে সাকিয়াকে উদ্ধার করে আজ সকালে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করি। পরে সেখান থেকে বিকেলে নেত্রকোনা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

এ দিকে খবর পেয়ে বেসরকারি সংস্থা স্বাবলম্বীর নির্বাহী পরিচালক বেগম রোকেয়া, নেত্রকোনা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাহেজা বেগমসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিরা হাসপাতালে সাকিয়াকে দেখতে আসে। তারা এ ঘটনার নিন্দা জানান ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবা উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


পিএনএস/জে এ মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন