চিরিরবন্দরে আশ্রায়ন প্রকল্পের বরাদ্দ লোপাট

  28-05-2017 12:35AM

পিএনএস, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ বরাদ্দের আশ্রায়ন প্রকল্পের কাজের অনিয়ম-দুর্ণীতির ও বরাদ্দ লোপাট করে কাজ শেষ করা হয়েছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর লক্ষীপুর শ্মশানকালী আশ্রয়ণ প্রকল্পে । আশ্রায়ন প্রকল্পে মাটি ভরাটের কথা থাকলেও ভরাট করা হচ্ছে বালু দিয়ে, আর অনুমতি ছাড়াই এই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে আশ্রয়নের ধারের কাঁকড়া নদী থেকে। বালু দিয়ে ভরাটের ফলে একদিকে যেমন প্রকল্পের অবকাঠামো দূর্বল হচ্ছে অপরদিকে হরিলুট করা হচ্ছে বরাদ্দকৃত অর্থ।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে আশ্রয়ন প্রকল্পে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার ৬নং অমরপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর শ্মশানকালী আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রকল্পটি মাটি দিয়ে ভরাটের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৮৬ মেট্রিক টন গম। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আশ্রয়ন প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজ করছেন ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেলাল সরকার। প্রায় দেড় মাস ধরে চলমান থাকা প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করতে আশ্রয় নেয়া হয়েছে অনিয়ম ও দুর্ণীতির। যা পুরোটাই করা হয়েছে প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের জন্য।

সরেজমিনে ওই আশ্রয়ন প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের ধারের কাঁকদা নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হয়েছে ভরাটের জন্য। কিন্তু আশ্রয়ন প্রকল্পটি মাটি দিয়ে ভরাট করার কথা ছিল। ড্রেজারের মাধ্যমে বালু দিয়ে প্রকল্পটি ভরাট করতে ব্যয় হবে মাত্র সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। এতে করে প্রকল্পটির মাটির অবকাঠামো যেমন দূর্বল হচ্ছে তেমনিভাবে হরিলুট করা হচ্ছে সরকারী অর্থ। এদিকে ড্রেজার মেশিন নদীতে চালানোর ফলে সরকার রাজস্বও হারাচ্ছে, পাশাপাশি প্রকল্পের পার্শ্বেই তা হওয়ায় ভবিষ্যতে আশ্রয়ণটি নদী ধ্বসের মধ্যে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক জানান, ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকায় প্রকল্পের ৭৬ শতক স্থানটি বালু ভরাটের ঠিকা নিয়েছেন ড্রেজার মেশিন মালিক। ড্রেজার মেশিন নদীতে চালানোর অনুমোদন নেয়া হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে তিনি জানান, এটি আমরা সঠিক জানি না। স্থানীয় চেয়ারম্যান সব ঠিকঠাক করে দেয়ার পরই তারা মেশিন চালাচ্ছেন।

একই কথা জানান, সেখানে কাজ করা এক শ্রমিক। তিনি জানান, মাঝখানে একবার প্রশাসনের লোকজন এসে মেশিন বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছিল। এর ৩ থেকে ৪ দিনের মাথায় আবারও মেশিন নির্ভয়ে চালানোর কথা জানান চেয়ারম্যান। বলেছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়ে গেছে, আর কোন ভয় নেই। নিয়ম অনুযায়ী নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনারের (ভুমি) অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটিও করা হয়নি।

চিরিরবন্দর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মাশফাকুর রহমান জানান, বালু উত্তোলনের সময় তিনি ঘটনাটি জেনেছিলেন। এরপরে সেখানে গিয়ে ড্রেজার মেশিন বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছিল। পরে তিনি ছুটিতে ঢাকায় যাওয়ার পর আবারও মেশিন চালু করা হয়। প্রকল্প কাজের তদারকি করছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান। অনিয়মের বিষয়ে তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে অনিয়ম হচ্ছে কি না সেটা তার জানা নেই। তাহলে তদারকি কিভাবে করছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদেরকে বিভিন্ন শর্তাবলী ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেই মোতাবেক কাজ হচ্ছে। তবে ছোট-খাটো ভুল থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

এই প্রকল্পের সুষ্টু বাস্তবায়ন, খাদ্যশস্য আত্মসাৎ এবং অপচয় রোধকল্পে প্রকল্পটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী জানান, সেখানে অনিয়ম হচ্ছে কি না সেটি তার জানা নেই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। যদি অনিয়ম করা হয় তাহলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। একইসাথে মাটি ভরাটের পর বাড়তি অর্থ ফেরত দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ৬নং অমরপুর ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল সরকার জানান, কাজটিতে সম্পূর্ণ মাটি দিয়ে ভরাটের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আশেপাশে মাটি না থাকার কারণে বালু দিয়েই ভরাট করা হচ্ছে। এই ভরাট সম্পন্ন করতে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার মত খরচ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের সহযোগিতায় ও নির্দেশেই কাজ শুরু করা হয়েছে। আশেপাশে মাটি না থাকায় বালুর উপরই নির্ভর করা হয়েছে। পাশাপাশি শ্রমিক না থাকার কারনে ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন