তিন হৃদয়ের মৃত্যুতেই শেষ বন্ধুত্ব

  29-05-2017 02:25PM


পিএনএস, কুমিল্লা: কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরপুর ইউনিয়নের পেন্নাই গ্রাম। এক গ্রামেই হৃদয় নামে তিনজন। নাম এক হওয়ার সুবাদে তাদের ভেতর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পেন্নাই গ্রামের মমিন ড্রাইভারের ছেলে মো. হৃদয় (২০) ওরফে বড় হৃদয়, শাহিন মিয়ার ছেলে মো. হৃদয় (১৯) ওরফে মেজ হৃদয় এবং পেন্নাই ফকির বাড়ির আমির হোসেনে ছেলে মো. হৃদয় (১৮) ওরফে ছোট হৃদয়।

দুই বন্ধু মিলে অপর বন্ধু বড় হৃদয়ের ব্যবসায় সহযোগিতা করতে তিনজন একসঙ্গে রবিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার কোর্টবাড়িতে মুরগির ব্যবসার খাবার নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে বিশ্বরোডের নিকট সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের পিকআপটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনারস্থলেই তিন হৃদয় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। তাদের মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। আজ সোমবার সকালে পেন্নাই জামিয়াতুল মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে তাদেরকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সরেজমিনে জানা যায়, তিন বন্ধু ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বেড়ে ওঠেন। বড় হৃদয় আর্থিক অস্বচ্ছল থাকার কারণে লেখাপড়া বেশি করতে পারেননি। একপর্যায়ে বাবার মুরগির ব্যবসার কাজে লেগে যান। অপর বন্ধু মেজ হৃদয় লেখাপড়া না করায় তার বাবা তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আগামী বুধবার ছিল তা মালয়েশিয়ার ফ্লাইট। কিন্তু বন্ধুর ব্যবসার সহযোগিতা করার জন্য গাড়িতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দিতে হলো। ছোট হৃদয় এবার গৌরীপুর সুবল-আফতাব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি ছিল। অবসর সময়ে বন্ধুকে সহযোগিতা করার জন্য সঙ্গে যাওয়ার পথে তাকে প্রাণ দিতে হলো।

একই এলাকায় তিন বন্ধুর এমন মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তিন পরিবারের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। মেজ হৃদয়ের বাবা শাহিন মিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি হৃদয়ের কথা বললেই বার বার মুর্ছা যান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'তারা ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে চলাফেরা করে বেড়ে ওঠে। একের পাশে অপরজন এগিয়ে যেত। আমার হৃদয় লেখাপড়া ভালো না করায় তাকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর জন্য আগামী বুধবার ফ্লাইট ঠিক করা হয়েছিল। আমার স্বপ্ন আল্লাহ পাক পূরণ করল না। '

ছোট হৃদয়ের বাবা আমির হোসেন পুত্রশোকে পাথর হয়ে গেছেন। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। বন্ধুকে সহযোগিতা করতে গিয়ে তিন বন্ধু লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল। মেজ হৃদয় বিদেশে যাবে সে গিয়ে বাকি দুই বন্ধুকে বিদেশ নিয়ে যাবে- এই ছিল তাদের স্বপ্ন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় তিন হৃদয় হারিয়ে গেল চিরতরে।

গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আবুল হাসেম সরকার বলেন, 'তিন বন্ধুর এমন হৃদয়ের বন্ধন আর একসঙ্গে মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাদের হৃদয়ের বন্ধন যারা দেখেছে সবাই অবাক হয়েছে। '

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন