ঝালকাঠির বিখ্যাত মুড়ির গ্রামে ব্যস্ত সময় পাড় করছে মুড়ি পল্লীর বাসিন্দারা

  29-05-2017 08:19PM

পিএনএস, (মো:নজরুল ইসলাম) ঝালকাঠি : ঝালকাঠির বিখ্যাত মুড়ির গ্রাম নামে পরিচিত সুস্বাদু মুড়ি দেশের সর্বস্থরে কদর থাকায় রমজানের শুরুতেই মুড়ি ভেজে পাইকারদের হাতে তুলে দিতে ব্যাস্ত সময় পাড় করছে ওখানকার ব্যাবসায়ীরা ।নলছিটির মুড়ি পল্লী তিমিরকাঠি গ্রামের বলতে গেলে প্রায় এক’শ ভাগ পরিবারই মুড়ি ভাজা ও তা বিক্রি করাই তাদের মূল উপার্জন।

আর মুড়ি ভাজা আধি পেশা হিসেবে ধরে রেখেছেন এ গ্রামের বাসিন্দারা। সারা বছরই এ কাজেই তাদের সংসার চলে। বিশেষ করে রমজান মাস এলেই তাদের ব্যাস্ততা বেড়ে যায় চোখে পড়ার মত । শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পর্যন্ত সকলেই মুড়ি ভাজার কাজে সহায়তা করেন। রমজানের আগেভাগেই মুড়ি ভেজে মজুদ রেখে বাড়তি উপার্জন করেন তারা।

সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটা পরিবারই মুড়ি ভাজা নিয়ে ব্যাস্ত। মাটির হাঁড়ি পাঁতিলের টুং-টাং শব্দ হাজারো মানুষের কর্মকার্যের মধ্য দিয়ে হাতে ভাজা এ মুড়ি দক্ষিনাঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে রপ্তানী করে থাকেন এ গ্রামের লোকজন। রমজান মাসে রোজাদারদের কাছে ইফতারীর প্রধান রসদ হিসাবে ব্যাবহার হচ্ছে অতি সুস্বাদু ও মিষ্ঠি মোটা চালের মুড়ি।

মুড়ি ব্যাবসায়ীরা জানায়, রমজান মাসে চাহিদার চেয়ে দৈনিক হাজার মন মুড়ি এ গ্রাম থেকে পাইকার ও আড়ৎদাররা সরবরাহ করেন। ইউরিয়া সারেরর ব্যাবহারবিহীন, হাতে ভাজা এ মুড়ি স্বাদে অতুলীনীয়। তাই প্রতিদিন মানুষের কাছে এ মুড়ি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাজারে অনেক সাদা ও প্যাকেট জাত মুড়ি থাকলেও তার চেয়ে কদর বেশী তিমিরকাঠী গ্রামের হাতে ভাজা এ মুড়ির।

স্থানীয় পাইকাররা জানান, যেসব দেখতে ধবধবে সাদা তা মেশিনে রাশয়নিক ক্যামিক্যাল ব্যাবহার ও ইউরিয়া সার যুক্ত করে তৈরী করা হয়। এসব মুড়ি স্ব্যাস্থের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় সচেতন মহল হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা তাদের। মেসার্স মা এন্টার প্রাইজ নামে একটি মুড়ি অড়ৎদারের মালিক মোঃ গিয়াস উদ্দিন খাঁন জানান, তিমিরকাঠী কিভাবে মুড়ি পল্লী হিসাবে রুপ নিয়েছে তার নেপথ্যের কথা। এক সময় দেশের অন্য দশটা গ্রামের মতই এ গ্রামের লোকেরা নিজেদের পরিবারের প্রয়োজনীয় মুড়ি ভাজতেন। ১৯৮৫ সালে পার্শ্ববর্তী গ্রাম জুরকাঠির বাসিন্দা আমজেদ নামের এক ব্যাক্তি মুড়ি ভেজে তা বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেন। তার দেখাদেখী তিমিরকাঠীর কয়েকটি পরিবার তাদের সংসারের আয় ভাড়াতে মুড়ি ভেজে বিক্রি করতে শুরু করেন।

এ ভাবে শুরু হয় মুড়ি ব্যাবসায় প্রতিযযোগীতা ।এক পর্য়ায় গ্রামের পরিবার গুলো মুড়ি ভেজেই তাদের সংসার চালাতে শুরু করে। বিগত শতাব্দীর আশির দশকে আ.হক নামে এক বিএসসি শিক্ষক বিভিন্ন স্থানের পাইকারদের মুড়ি ক্রয়ের জন্য উদ্ভোদ্ব করে এ গ্রামে নিয়ে আসেন। এর পরই এ অঞ্চলের মুড়ির কদর বাড়তে থাকে। স্থানীয় মুড়ি কারিগর দেলোয়ার হোসেন ,মোসাঃ খাদিজা বেগম জানান, মুড়ির জন্য উপযোগী বিষেশ তিনটি প্রজাতির ধান ফলে বলেই এ এলকায় মুড়ির উৎপাদন করতে ভালো হয় । দপদপিয়া ইউনিয়নে মোটা নাখুচী ও সাদা মোটা নামের তিন প্রজাতির ধানের ব্যাপক ফলন হয়। পূর্বে এক মাত্র বউরি ধানের মুড়ির প্রচলন থাকলেও এখন তার চেয়েও সরস ধান হিসেবে নাখুচী ধানের মুড়ির কদর বেড়েছে।

এছাড়াও দিনাজপুর থেকে নাম্ভার ১৬ এবং ভারতের নলটি চাল ক্রয় করে তিমিরকাঠীর মানুষ মুড়ি তৈরী করেন। বানিজ্যিকভাবে মুড়ি ভাজার সাথে তিন যুগ ধরে এ গ্রামের পরিবার গুলো মুড়িভাজার পেশায় নিয়োজিত। জানাগেছে, দৈনিক গড়ে ১০০কেজি মুড়ি ভাজতে পারলে খরচ বাদ দিয়ে ৭/৮শ টাকা লাভ হয়। তবে নিজেরা ধান কিনে সিদ্ধ করে শুকিয়ে মুড়ি ভেজে শহরে নিয়ে বিক্রি করলে দ্বিগুন লাভ হয়। তাই সল্প পুজির মানুষ রমজান মাসে কমপক্ষে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হয়।

স্থানীয় অড়ৎদাররা এ গ্রাম থেকে মুড়ি সংগ্রহ করে দক্ষিনঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা,বরিশাল,চট্রগ্রাম,ফরিদপুর,চাদপুর, নোয়াখালী,কাউখালী,পটুয়াখালী,মির্জাগঞ্জ,মহিপুর,কুয়াকাটা,গোপালগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী করেন বলে জানান। অপদিকে এ গ্রামের গরিব লোক গুলো ভিবিন্ন এনজিও থেকে অধিক সুদে লোন নিয়ে এ ব্যাবসা করায় তাদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে দাবী করেন। তারা অল্প সুদে লোন পেলে ভাল ব্যাবসা করে জীবীকা নির্বাহ করতে পারেতো বলে জানান।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন