বেনাপোল সীমান্ত এখন সোনা পাচারের নিরাপদ রুট

  20-07-2017 02:14PM



পিএনএস, বেনাপোল : যশোরের বেনাপোল সীমান্ত এখন সোনা পাচারের নিরাপদ রুট হিসাবে পরিণত হয়েছে। গত পাঁচ মাসে এ সীমান্ত থেকে ১৬ কেজি ২শ গ্রাম সোনা উদ্ধার করেছে বিজিবি এবং কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। ভারতে সোনার দাম বেশি হওয়ায় আন্তর্জাতিক চোরাচালানীরা বেনাপোলের সীমান্ত পথে ভারতে সোনা পাচার করছে। তাছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার দূরত্ব বেনাপোল সীমান্ত থেকে মাত্র ৮৪ কিলোমিটার এবং যাতায়াত ব্যবস্থাও সুবিধাজনক হওয়ায় চোরাচালানীরা এ রুটকে নিরাপদ মনে করে প্রতিদিন কেজি কেজি সোনা ভারতে পাচার অব্যাহত রেখেছে।
বিজিবি এবং কাস্টমস সূত্রমতে গত পাঁচ মাসে ভারতে পাচারের সময় ১৪৬পিস বা সাড়ে ১৬ কেজি সোনাসহ ১০জন পাচারকারীকে আটকের তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারী দৌলতপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা বড় আঁচড়া গ্রামের বজলুর রহমানকে (৫৫) ১৪ পিস সোনার বিস্কুটসহ আটক করে। ৪মার্চ দৌলতপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা গাতিপাড়া গ্রামের বিশ্বাসকে (৩৫) ২০পিস সোনাসহ আটক করে। বেনাপোল বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা ১এপ্রিল শামীম হোসেন (২১) এবং হোসেন আলী (২৫) নামে দুজন চোরাচালানীকে ১৫টি সোনার বারসহ আটক করে। ২৭ মে বেনাপোল সীমান্তের দৌলতপুর ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা ২ কেজি ৩শ গ্রাম ওজনের ২০টি সোনার বিস্কুটসহ বড়আঁচড়া গ্রামের মনিরুজ্জামানকে (৩৮) আটক করে। পুটখালী ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা ৩০মে মনির হোসেনকে (২৫) ১০পিস সোনার বিস্কুটসহ হাতেনাতে আটক করে।

এ বছরের জুন মাসের ৫ তারিখে পুটখালী বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা বাবুল হোসেনকে (২৩) ১০টি সোনার বারসহ আটক করে। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে চোরাচালানের মাধ্যমে সোনা পাচারের সময় পাচারকারীরা সোনাসহ বিজিবির হাতে আটক হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানীরা তাদের কৌশল বদল করেছে। চোরাই পথে সোনা ভারতে পাচার না করে এবার তারা পাসপোর্ট যাত্রীদের মাধ্যমে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়েই ভারতে সোনা পাচার করছে। পাসপোর্ট যাত্রীদের মাধ্যমে সোনা পাচারের সময় ১১জুলাই নারায়ণগঞ্জের আবু সালামকে (২৭) বেনাপোলের ওপারে ভারতের হরিদাসপুর আইসিপির কাস্টমস সদস্যরা ২০টি সোনার বারসহ আটক করে, যার ওজন ২ কেজি ৩শ গ্রাম। বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে সোনাসহ আটকের পর বাংলাদেশের বেনাপোল চেকপোস্টের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। বহির্গমন চেক পয়েন্টের স্ক্যানিং মেশিনটি দ্রুত মেরামত করে চালু করা হয়। পর দিন এ মাসের অর্থাৎ জুলাই মাসের ১২তারিখে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের শুল্ক গোয়েন্দার সদস্যরা চেকপোস্ট এলাকা থেকে ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রী পারভেজকে (২৫) ৭টি সোনার বিস্কুটসহ আটক করে। জুতার সোলের মধ্যে লুকিয়ে এ সোনা পাচার করা হচ্ছিল বলে শুল্ক গোয়েন্দারা জানায় । গত ১৪ জুলাই পাসপোর্ট যাত্রী জালাল আহমেদ সেলিমকে (৪৪) ৫পিস সোনার বিস্কুটসহ চেকপোস্ট কাস্টমস এলাকা থেকে শুল্ক গোয়েন্দারা আটক করে। সর্বশেষ গত রোববার ২কেজি ৭শ’ ৫০গ্রাম ওজনের ১১পিস সোনার বারসহ পাসপোর্ট যাত্রী ঢাকার ওয়ারি এলাকার রুখসানা বেগমকে (৩৩) শুল্ক গোয়েন্দারা আটক করে।

সীমান্তের একটি সূত্র জানায়, গত ৫মাসে ১৬কেজি সোনা আটক হলেও প্রতিদিন পাসপোর্ট যাত্রী এবং চোরাচালানীদের মাধ্যমে প্রতিদিন কেজি কেজি সোনা ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকা থেকে ৪বার হাত বদল হয়ে সোনা পাচার হয় ভারতে। প্রথমত ঢাকা থেকে ট্রেন অথবা বাসে একটি গ্রুপ সোনা নিয়ে বেনাপোলে আসে। পরিবহন কাউন্টার অথবা তাদের নির্ধারিত স্থানে সোনার চালানটি বদল হয় স্থানীয় এজেন্টদের হাতে। স্থানীয় এজেন্টের বহনকারীরা সোনার চালানটি নিয়ে চলে যায় গাতিপাড়া, দৌলতপুর বা পুটখালী সমীন্তের কোন বাড়িতে। সেখান থেকে হাত বদল হয় শুধুমাত্র সীমান্ত পার করে ভারতীয় এজেন্টর হাতে পৌঁছানোর জন্য। সূত্রটি আরও জানায়, সোনা পাচারকারী চক্রের স্থানীয় পুরুষ সদস্যরা বিজিবির হাতে আটক হওয়ায় এ চক্রে বর্তমানে মহিলা সদস্যরা যোগ দিয়েছে। তারা নতুন নতুন কৌশলে রাতে ও দিনে বেনাপোল বাজার থেকে সোনা নিয়ে সীমান্তে পৌঁছে দিচ্ছে।

এছাড়া মহিলা পাসপোর্ট যাত্রীরা ঢাকা থেকে সোনা নিয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে ধ্বংস করে আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানী চক্র বেনাপোল সীমান্তের অবৈধ পথ এবং পাসপোর্ট যাত্রীর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার সোনা ভারতে পাচার করছে। এ ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ বেনাপোলে নিয়োজিত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি জোরদার করে সোনা চোরাচালান বন্ধ করা উচিৎ বলে মনে করেন সচেতন মহল।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন