বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আ.লীগ নেতাদের মনোনয়ন লাভের প্রতিযোগিতা

  21-07-2017 04:04PM

পিএনএস, বরিশাল প্রতিনিধি : আগামী নির্বাচনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য সেরনিয়াবাত পরিবারে চলছে প্রতিযোগিতা। চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন ও ভাতিজা সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। আর এই পরিবারের বাইরে মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছেন কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম।

২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের বরিশাল-৫ আসনে সদস্য পদে নির্বাচন করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের কাছে হেরে যান শামিম। তবে বরিশালের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের অনুকূলে সর্বোচ্চ ভোট পান তিনি। তাই দলের মনোনয়ন নিয়ে পরিবারিক দ্বন্দ্ব দূরীকরণে কেন্দ্রের কাছে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তিনি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। জাহিদ ফারুক শামিম, আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত ও সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ছাড়াও বরিশাল সিটি করপোরেশনের আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আরো কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, প্রাক্তন মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণপন্থি মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবজালুল করিম ও গত নির্বাচনে জামানত হারানো প্রার্থী মহানগর যুবলীগের প্রাক্তন যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন। সূত্র মতে, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রায় এক বছর বাকি থাকলেও নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষে কে মেয়র পদে মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে ৬৫ বর্গ কিলোমিটারের এই নগর জুড়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।

২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল বরিশালের প্রাক্তন মেয়র ও সংসদ সদস্য এবং বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর দলের কারুারী হিসেবে জাহিদ ফারুক শামিমের নাম শোনা যায়। তবে মাহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রায় ১৬ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা প্রাক্তন সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালকে। এর আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ আসনে জাহিদ ফারুক শামিম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হিরণ হেরে যাওয়ায় মানবিক দৃষ্টিকোনে দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

অন্যদিকে হিরণের মৃত্যুর পর বরিশাল-৫ আসনে ২০০৯ সালে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জাহিদ ফারুক শামিম। তখন এই আসনে তার জায়গায় অন্য কেউ যাতে মনোনয়ন না পায়, সে দাবি উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণের পরিবারের কথা বিবেচনা করে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিরণের স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজকে মনোনয়ন দেন। তাই এবার আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জাহিদ ফারুক শামিমের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন নগরবাসী।

এদিকে শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালের সঙ্গে অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীরকে সাধারণ সম্পাদক করে যুগ্ম সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বড় ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে। আর সেই থেকেই দলের অন্যতম নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তার মূল লক্ষ্য আসন্ন বারিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া। সে লক্ষ্যেই হিরণের মৃত্যুর পর তিনি দল গোছাতে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড জুড়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

এই ব্যাপারে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, ‘গত ৮ এপ্রিল ও ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত মহানগর আওয়ামী লীগের পৃথক সভায় দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম কেন্দ্রের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মহানগর আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষে তার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।’

অপরদিকে সেরনিয়াবাত পরিবারের আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট ছেলে এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, সম্ভাব্য পারিবারিক দ্বন্দ্বের অবাসন ঘটাতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন জাহিদ ফারুক শামিম। তিনি ২০০৮ সালে বরিশাল-৫ আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে বিএনপির বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের কাছে ৬ হাজার ৩০১ ভোটে পরাজিত হন। আর যে ভোট পেয়েছিলেন তা এ আসনের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের পক্ষে সর্বোচ্চ ভোট ছিল। বরিশাল সিটি করপোরেশন ও বরিশাল-৫ আসনের ভোট পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল ১৮ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণ পান ৪২ হাজার ভোট। আর এর আগের নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরণ মাত্র ৫০০ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে মেয়র হন। অন্যদিকে ২০০৮ সালে বরিশাল-৫ আসনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামিম ৬ হাজার ৩০১ ভোটে পরাজিত হন। তখন এই আসনে তিনি পেয়েছিলেন ৯৯ হাজার ৬২৪ ভোট। বরিশাল সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জাহিদ ফারুক শামিম বলেন, ‘২০০৮ সালের পর থেকেই আমি বরিশালের রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকান্ডসহ সকল কর্মকান্ডে দলের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৬৮ সালে ৬ দফা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তারই নির্দেশে ১৯৭০ সালে তৎকালীন সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে পরে দেশের স্বাধীনতার জন্য সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। ২০০৫ সালে অবসর গ্রহণ করি এবং ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বরিশালের রাজনীতির সঙ্গে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই দল চাইলে নৌকার হয়ে আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে নামতে রাজি আছি। অন্যদিকে এখানে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও প্রাক্তন সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম।

প্রাক্তন মেয়র হিরণের অনুসারী আফজাল নিজেকে হিরণপন্থিদের প্রার্থী বলে উল্লেখ করেন। তার সঙ্গে রয়েছেন হিরণের সহযোদ্ধা প্রবীণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য চলছে নানা তোড়জোড়। এ ছাড়া গত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়িয়ে জামানত হারানো প্রার্থী মহানগর যুবলীগের প্রাক্তন যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন এবারও ভোটযুদ্ধে নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন । উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি করপোরেশনের তৃতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণকে ১৭ হাজার ১০ ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল। তিনি পেয়েছিলেন ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট। একই বছর ৮ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব নেন কামাল। সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার তিন মাস আগে তিন প্যানেল মেয়রের একজন ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পাবেন। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন পরবর্তী সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। বর্তমানে বরিশাল সিটি করপোরেশনে ভোটার রয়েছেন দুই লাখ ৩৭ হাজার ৬০৭ জন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন