হাওরে এখনও বন্ধ ১৩৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

  21-07-2017 10:23PM

পিএনএস : হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওরের পানি কমছে না। এ কারণে মৌলভীবাজারের পাঁচটি উপজেলায় এখনও ১৩৯টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যযক্রম চালু হয়নি। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১২টি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭টি। এসব বিদ্যালয়ের ৪১ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। কিছু বিদ্যালয়ের ভবন থেকে পানি নামলেও চারদিকের রাস্তাঘাট এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের আসা-যাওয়ার সুযোগ নেই।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘শুক্রবার (২১ জুলাই) শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ও সিলেটের শেওলা পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।’

নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ধীর গাতিতে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে দিনে কমলেও রাতে বৃষ্টি হলে আবারও হাওরে পানি বেড়ে যায়।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও কুশিয়ারা নদীর পানিতে বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। বাড়িঘর, রাস্তাঘাটের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক বিদ্যালয়ের ভবনে পানি ঢুকে পড়ে। অনেক বিদ্যালয় ভবনের চারদিকে পানি জমে আছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে ২৬ জুন থেকে পাঁচটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে এমন দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়নি।

স্থানীয় লোকজন জানান, বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের ইউনাইটেড উচ্চবিদ্যালয় ভবন থেকে পানি কিছুটা নেমেছে। কিন্তু রাস্তা দুই থেকে চার ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের সুযোগ নেই।
কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের মনসুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশের রাস্তাসহ চারদিকে পানি। একই অবস্থা সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের পানি উঠেছে। বিদ্যালয়ের প্রবেশের রাস্তায় এক থেকে দুই ফুট পানি জমে আছে। বিদ্যালয়ের সামনে হাঁটুপানি। আশপাশের বাড়িগুলো পানিতে তলিয়ে আছে। বেশির ভাগ বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র মাধ্যম নৌকা। তবে সব পরিবারে নৌকাও নেই। এমতাবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে আসার কোনও সুযোগ নেই।

এদিকে, মদনগৌরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে কোমর পর্যন্ত পানি ঢেউ খেলছে। হাকালুকি হাওরের পানির সঙ্গে একাকার হয়ে আছে বিদ্যালয় এলাকা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে যায়। পানিবন্দি বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। বন্যা কিছুটা কমলে কিছু বিদ্যালয় ভবন থেকে পানি নেমে যায়। স্কুল থেকে পানি সরে যাওয়ায় ৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। পানি থাকায় ১১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ। স্কুল থাকায় প্রাথমিকে প্রায় ২২ হাজার ছাত্রছাত্রীর পাঠদানে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক বিদ্যালয়ের বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিলও পানিতে ভাসছে। দরজা-জানালা পানিতে ডুবে যাওয়ায় তা পচে নষ্ট হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলা ও দু’টি পৌরসভার ৩৫০টি গ্রামে তিন লাখ ১০ হাজার ৮০ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। এখনও প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি আছেন। উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৫৫ হাজার ২৬৭টি, ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৬৪৩ হেক্টর, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ৫২৫টি, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৬১০৮টি, ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র ৫৫০টি পরিবার ছিল। ২৫০টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘বন্যার প্রথম দিকে ১৬০টি স্কুলে পানির ওঠে। এর ৪০টি বিদ্যালয় পানি নেমে যাওয়ায় সেগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়।’

শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, বন্যায় বিদ্যালয়গুলোতে প্রাথমিকভাবে প্রায় তিন কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘২৭টি বিদ্যালয় পানিবন্দি রয়েছে। স্কুলের ভবন ও ভবনের বাইরে পানি থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমেছে, সেগুলোতে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।’

কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির শুক্রবার বলেন, ‘বন্যার কিছু কমছে। তবে কিছু কিছু বাড়ি-ঘর থেকে পানি নামলেও উঠানে পানি এখনো জমে আছে। কারণ রাতে বৃষ্টি হলে আবার পানিতে ভরে যায় হাকালুকি হাওর। বাড়ি-ঘরে পানি না কমলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।’

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন