পটুয়াখালীর বাউফলে প্রসূতির অপারেশন নিয়ে হাইকোর্টের রুল

  25-07-2017 11:52PM

পিএনএস, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর বাউফলের একটি ক্লিনিকে এক প্রসূতির অপারেশনের তিন মাস পর বরিশাল শের ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পূনরায় অপারেশন করে পেট থেকে গজ-ব্যান্ডেজ বাহির করার ঘটনা প্রকাশিত হওয়ায় বিষয়টি জানানোর জন্য হাইকোট থেকে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পটুয়াখালী সিভিল সার্জন এবং বরিশাল শের ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধানসহ ৯ জনকে ১ আগষ্ট হাইকোর্টে তলব করা হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পটুয়াখালী সিভিল সার্জন অফিস এখনো বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন।

এবিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে বাউফলের বিলবিলাস গ্রামের অটো চালক রাসেল সরদারের গর্ভবতী স্ত্রী মাকসুদা বেগম(২৫) কে সিজার অপারেশন করার জন্য বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে নিরাময় ক্লিনিকে আনা হয়। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ফার্মাসিস্ট কাম স্টোর কিপার মাহাবুব উদ্দিন নান্নু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণের বিনিময়ে ওই প্রসূতিকে নিরাময় ক্লিনিকে ভর্তি করান।

জানা গেছে, ওই দিন ওই ক্লিনিকে অপারেশনের জন্য কোন ডাক্তার ছিলেন না। পার্শ্ববর্তী একটি ক্লিনিক থেকে রাজন দাস নামের এক ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে অপারেশন করানো হয়। অপারশেনের পর যথারীতি পেট সেলাই করে দুদিন পর প্রসূতিকে ক্লিনিক থেকে নাম কেটে দেয়া হয়। ওই ডাক্তার বাউফলের কালিশুরী এলাকায় নিউ লাইফ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। ঘটনার এক মাসের মাথায় মাকসুদার পেটে অসহ্য যন্ত্রনা শুরু হলে তাকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করার পর গত ২১ জুলাই তার পেটে পূন: অপারেশন করে পেট থেকে গজ ব্যান্ডেজ বের করা হয়। বর্তমানে মাকসুদা ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে।

এঘটনা একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পেলে গত ২৩ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি সালামা মাসুদ চৌধুরী ও একেএম জহিরুল হকের সমন্বয় বেঞ্চ স্ব-প্রনোদিত হয়ে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ এনে আগামী ১ আগষ্ট স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধানসহ ৯ জনকে হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে বলেছেন।

এদিকে হাইকোর্ট থেকে কারণ দর্শাতে বললেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পটুয়াখালী সিভিল সার্জন কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি নিয়ে এখনো অন্ধকারে রয়েছেন। পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা.মো. আ. জব্বার জানান, আমরা এখনো কোন পদক্ষেপ নেইনি। তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। শীঘ্রই একটি তদন্ত টীম গঠন করে ওই দিন নিরাময় ক্লিনিকে ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল সেটা খতিয়ে দেখবো। তিনি জানান, ক্লিনিকটির পরিচালক তাদের রেজিষ্ট্রেশন নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। সে বিষয়েও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুরুল আলম জানান, বিষয়টি নিয়ে কি করনীয় সেটা সম্পর্কে আমাদেরকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এখনো কিছুই জানাননি। তবে আমরা ক্লিনিকটির ব্যবস্থাপকদের ডেকে ছিলাম, কিন্তু তারা আসেনি।

একটি সূত্র জানান, বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকটি দশমিনা উপজেলার বাশবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রবাসী আল মামুন যুব’র নামে রেজিস্ট্রেশন করানো হলেও স্থানীয় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কয়েকজন চাকুরীজীবিসহ ২২/২৩ জন প্রভাবশালীরা রেজিস্ট্রেশনটি ক্রয় করে নিয়ে ক্লিনিকটি চালাচ্ছেন। ক্লিনিকটি থেকে ওই প্রসূতির কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক ডাক্তার জানান, বিধিবিধান উপেক্ষা করে হাসপাতালের নাকের ডগায় সেবা ও নিরাময়সহ একাধিক ক্লিনিককে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। এখন ওই ক্লিনিকগুলো রোগি মারার কারখানায় পরিনত হয়েছে। স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে, নাম গোপন করে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য বিভাগের বেশ কয়েকজন চাকুরীজীবি এবং স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ওই ক্লিনিকগুলোতে শেয়ার রয়েছেন। যার কারণে অনেক ধরণের অপরাধ করেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, এর আগেও বাউফলের ওই ক্লিনিকগুলোতে একাধিক গর্ভবতী মহিলা অপারেশন করতে এসে মুত্যুবরণ করেছেন।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন