ঘুম নেই, না খেয়ে কাটে দিন

  15-08-2017 10:13PM

পিএনএস, বগুড়া প্রতিনিধি : তিনদিন ধরে ঘরের মধ্যে পানি। হামাকেরে চোখে ঘুম নাই। ঘর থুয়ে ছোলপোল লিয়ে মাচার উপর বসে থাকি। রোজগার নাই, খামু কি। কেউ দেখবার আল না। অবুঝ বাচ্চাক কোনো খাবার দিতে পারিনি। ঘরে খাবারও নাই। এভাবেই আবেকের সাথে দুঃখের কথা বলছিলেন বগুড়ার সারিয়াকান্দির বন্যা কবলিত এলাকার অসহায় দিনমজুর রফিক।

গৃহীনি আছিয়া, রিনা, কহিনুর সহ বন্যা কবলিত অর্ধশত নারী এপ্রতিবেদকে বলেন, হামরা বানের পানিতে ভাঁসে যাচ্চি, আর আপনেরা খালি হাতে দেকবের আচ্চেন ? না খায়্যে দিন কাটে হামাকেরে। একবেলাও বাচ্চার মুখেত খাবার জোটেনা। ভিক্ষা (সাহায্য) করে চাল জুটলেও বাড়িত রান্না করার অবস্তা নাই। চারদিক পানিতে থৈথৈ। চিড়া খায়্যা দিন যায়না ভাই, আর কয়দিন থাকা যায়।

স্থানীয় সাংবাদিক শিবলী সরকারকে সাথে নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় সারিয়াকান্দির সদর, কাজলা, চালুয়াবাড়ি, কুতুবপুর, কর্ণিবাড়ি, কামালপুর, বোহাইল ও চন্দনবাইশা ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকার শতশত মানুষের সাথে। বন্যা পরিস্থিতি দেখার জন্য গেলে দুর্গত মানুষরা ত্রাণের আশায় আমাদের ঘিরে ধরে। যখন জানতে পারেন এরা ত্রাণ দিতে আসেননি, তখন তীব্র ক্ষোভে ফিরে যান। সাংবাদিক জানার পর কেউ কেউ আবার এগিয়ে এসে তাদের দুর্ভোগের কথা জানান।

তারা নৌকা বা কলা গাছের তৈরী ভেলার উপর রান্না করে কোনমতে জীবন অতিবাহিত করছে। বন্যাক্রান্ত লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্যা আক্রান্ত লোকজনের মাঝে দ্বিতীয় দফায় এখনও কোনো ত্রাণ সামগ্রী না পৌছালোও বগুড়া জেলা প্রসাশক নূরে-আলম সিদ্দিকী ও পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান পৃথকভাবে বন্যা র্দূগত এলাকা পরির্দশন করেন।

সূত্রমতে, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সঙ্কট, মানুষের দুর্ভোগ ও পানিবাহিত রোগের প্রার্দুভাব, মেডিকেল টিম গঠন, কোথাও পানি কিছুটা কমেছে, কোথাও পরিস্থিতি অপরিবর্তীত, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত, ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ, হুমকির মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে এগুচ্ছে। কিন্তু বন্যা কবলিত মানুষের ভোগান্তি কমেনি। দিনদিন ভোগান্তির মাত্রা বেড়েই চলছে। এছাড়াও পানিবাহিত রোগের মহামারি দেখা দিয়েছে। যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ১২০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং তা অব্যহত রয়েছে। ফলে নদীর তীরবর্তী লোকজনের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ১২০ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিপদের অশস্কা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বি.আর.ই ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম বলেন, সারিয়াকান্দি উপজেলার যেসব বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে, আমরা সেগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষা করার সর্বাত্বক চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়াও আমাদের নজরদারী চলছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে যেকোনো মুহুর্তে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে। কালিতলা গ্রোয়েন বাঁধ, হাসনাপাড়া দিঘাপাড়া বাঁধ, সদর ইউনিয়নের দিঘলকান্দি বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি লোকজন স্থানীয় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উচু যায়গায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিরাপদ খাবার পানি, পয়নিষ্কাণ ব্যবস্থা, রান্না করা সহ গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে।

বগুড়া জেলা প্রসাশক নূরে-আলম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, বন্যা মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা প্রসাশন প্রস্তুত রয়েছে। বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে। অতিসত্তর বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা বর্ন্যাত মানুষের পাশে থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

সূত্রমতে, ৯টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় মুখ থুর্বে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা। ৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িক ভাবে বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। কোথাও বিকল্প উপায়ে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৫হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে এবং অসংখ্য পুকুর প্লাবিত হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে মৎস্য চাষ ব্যবস্থা। ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন