জন্মগত ভাবে পঙ্গু বলে মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা হচ্ছে

  17-08-2017 09:00PM

পিএনএস, ঝালকাঠি প্রতিনিধি : যুদ্ধের মাঠে পঙ্গু হওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধাকে জন্মগত ভাবে পঙ্গু বলে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমান করা হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে সেদিন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার এক পা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। আজ আমার প্রতিপক্ষরা আমাকে জন্মগতভাবে পঙ্গু বলে নানা জায়গায় অভিযোগ দিয়ে হয়রাণী করছে। এরা আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধের জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। এরা আমাকে হত্যা করতে চায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) ঝালকাঠি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব হাওলাদার লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ আমি ঝালকাঠি সদর উপজেলার ০১নং গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ০৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা। একটি কুচক্রী মহল আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। কুচক্রী মহলটি আমার পৈত্রিক সম্পত্তির কিছু অংশ জবরদখল করে ভোগ করছে। চক্রটি আমাকে গত ২০০৪ সনে হত্যার চেষ্টা চালায়। এরা ২০১৪ সালে পুনরায় আমাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে বাম হাত ভেঙে ফেলে। আমার সন্তানাদি এদের কাছে নিরাপদ নয়। যেকোন সময় আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যা করতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব অভিযোগ করেন ২০১৪ সালে ওবায়েদুল হক মানিক, পিতা: মৃত আলতাফ উদ্দিন, খোকন, রিপন, উভয় পিতা: কবির উদ্দিন হাওলাদার, সবুজ হাওলাদার, পিতা: মালেক হাওলাদার, সাং- বালিগোনা, পোঃ রামচন্দ্রপুর, থানা ও জেলা: ঝালকাঠি ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির আরো ৪/৫ জন নিয়ে আমাকে মেরে আমার বাম হাত ভেঙ্গে দেয়। আমাকে খুন করতে না পেরে আমার বসত ঘর দাও, রামদা দিয়া কুপিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এই ঘটনায় ঝালকাঠি বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তার নাম মুক্তিবার্তার লাল বহিতে ০৬০২০১০৭২৩ নং ক্রমিকে নাম লিপিবদ্ধ আছে এবং পরবর্তী ২০০৫ সনে ঝালকাঠি জেলায় ২৫১ নং ক্রমিকে তার নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত সম্মানী ভাতা প্রথম পর্যায় হইতে ৩০০/- টাকা হারে ও পরবর্তীতে ৫০০/- টাকা পর্যায়ক্রমে ৬০০/- টাকা, ৯০০/- টাকা, ১৫০০/- টাকা, ৩০০০/- টাকা ও সর্বশেষ প্রতিমাসে ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা করে সম্মানী ভাতা প্রাপ্ত হন। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ওবায়দুল হক মানিক একটি মিথ্যা অভিযোগ তুলে সম্মানী ভাতা বন্ধের পাঁয়তারা করছে। ইতিপূর্বে ১০/০৮/১৪ তারিখে বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একখানা অভিযোগ দায়ের করেন।

উক্ত আবেদনখানা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ২৬/০৮/১৪ তারিখে উপ-সচিব মোঃ জহিরুল ইসলামের পত্রাদেশের আলোকে জেলা প্রশাসককে ওবায়দুল হকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমি মুক্তিযোদ্ধা কিনা উহা তদন্তের নির্দেশ দেন। উক্ত নির্দেশনা পত্রের আলোকে জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসক ও ঝালকাঠি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটসহ সর্বত্র সেক্টরে আমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা উহা ব্যাপকভাবে তদন্ত হয়। ব্যাপক তদন্তে গ্রাম পর্যায়ের ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমনকি ঝালকাঠি-নলছিটির নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য ও মাননীয় শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্ব আমির হোসেন আমুও আমার পক্ষে সুপারিশ সহকারে মন্তব্য দিয়া আমাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দেন।

যার কারণে তৎকালীন ওবায়দুল হকের আবেদনের তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভূয়া ভিত্তিহীন বলে ওবায়দুল হক মানিক এর আবেদনখানা অকার্যকর বলে মন্ত্রণালয়ে এক রিপোর্ট পেশ করেন এবং আমি সঠিক মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাদের তদন্তে বিবেচিত হই। ৩০ শে ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ওবায়দুল হক মানিকের আনিত দরখাস্ত না মঞ্জুর হয়ে আমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা প্রমানিত হয়। আমার বিরুদ্ধে উক্ত দরখাস্ত দিয়া কোনরূপ ক্ষতি সাধন করিতে না পেরে পরবর্তীতে আবারও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটিতে হুবহু দরখাস্ত ফটোকপি করে দাখিল করা হলে যাচাই বাছাই কর্তৃপক্ষ আমাকে কোন নোটিশ না দিয়া আমার সম্মানী ভাতা এপ্রিল/১৭ থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত আটক রাখেন। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেতৃবৃন্দের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল




@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন