মধুপুরে পরকিয়া সালিশে যুবক হত্যা ঘটনার অন্তরালে ঘটনা

  23-08-2017 10:34PM

পিএনএস, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি : ধর্ষকের পক্ষে মামলা পরিচালনা অজুহাতে প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার অভিযোগ, পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান, পরকীয়া নিয়ে সাজানো দরবার, পক্ষান্তরে সালিশে মারামারি, পরবর্তীতে এক নিরীহ যুবকের মৃত্যু।

এ সবই প্রভাবশালী স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফের দলীয় প্রভাব। আর পরকীয়ার সালিশে মাসুদ রানার (২৩) মৃত্যুর পর বেড়িয়ে আসে দূশ্চরিত্র আব্দুল লতিফ মেম্বারের থলের বিড়াল। ঘটনাটি ঘটে গত ১৯/০৮/১৭ তারিখে মধুপুর থানার দক্ষিণ লাউফুলা গ্রামের সিদ্দিক মাষ্টারের আকাশ মনি বাগানের সালিশী বৈঠকে। ঐ গ্রামের সরেজমিনে গেলে সুরুজ আলীর স্ত্রী জয়মন জানায়, স্থানীয় বিদেশ প্রবাসী জুরান আলীর মাদকাসক্ত ছেলে নাঈম হোসেনের (১৮) অত্যাচারে অতিষ্ট মা প্রায়ই ঢাকায় থাকে তার বোনের বাসায়।

গত ২৭/০৫/১৭ তারিখে নাঈমের দাদী রেজিয়া (৬০) প্রতিবেশি শফিকুলের মেয়েকে ডেকে এনে ঘর লেপতে দিয়ে ঘাস কাটতে বাহিরে যায়। জনশূণ্য বাড়ীতে একা পেয়ে তাকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষিতা কান্নায় চিৎকার করিতে করিতে নিজ বাড়ীতে আসে। বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত শিউলির অবস্থা দেখে বিমূর্ষ হয়ে যায় প্রতিবেশীরা। এনিয়ে স্থানীয় ভাবে সালিশও বসে। সালিশে ইউপি মেম্বার লতিফ ধর্ষক নাঈমের পক্ষ নেয়। এতে সালিশ ভন্ডুল হয়ে যায়। পরে ২৮/০৫/১৭ইং তারিখে ধর্ষিতার বাবা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মধুপুর থানায় একটি মামলা (নং ২৪ তারিখ ২৮/০৫/১৭) দায়ের করেন। ধর্ষকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে তার মা স্বপ্নার সাথে পরকীয়ার অভিযোগ উঠে। এদিকে ধর্ষিতার বাবা মার পাশে এসে দাড়ায় স্থানীয় প্রতিবেশী সুরুজ আলী ও হাবিবুর রহমান।

এতে এরা লতিফ মেম্বারের রোশানলে পড়ে যায়। এদিকে লতিফ মেম্বার ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে মামলা পরিচালনার অজুহাতে লাখলাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া ছাড়াও প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে অবৈধ পরকীয়ার জড়িয়ে পড়ে। এদিকে লতিফ মেম্বার ধর্ষিতার বাবা মার পক্ষের লোকজনকে মামলা মোকদ্দমার ভয় ও খুন গুমের হুমকী দিলে চরম অসহায় হয়ে পড়ে তারা। পরে গত ১৯/০৮/১৭ তারিখে সুরুজ আলী, হাবিবুর রহমান ও ধর্ষিতার বাবা শফিকুলের বিরুদ্ধে পরকীয়ার রটানোর অভিযোগ এনে পরিকল্পিত ভাবে স্থানীয় সিদ্দিক মাষ্টারের আকাশ মনির বাগানে পরকীয়া নিয়ে সালিশ বসে। পূর্ব থেকেই এ সালিশ সর্ম্পকে জানাজানি হওয়ায় ঘাটাইল ও মধুপুর থানার ২সহ্রাধিক ঔৎসুক্য জনতার উপস্থিত ঘটে। সালিশে লতিফ মেম্বারের ভাড়াটিয়া বাহিনি দেখে স্থানীয়দের মাঝে অনেকটাই আতংক বিরাজ করতে থাকে।

ফলে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। এতে লতিফ মেম্বারের বিরুদ্ধে পরকীয়ার প্রামাণ না হওয়ায় তার পক্ষে রায় দেয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। আর এ সংঘর্ষের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করতে গেলে লতিফ মেম্বারের লোকজন মাসুদ রানার উপর হামলা করে এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ঘাটাইলের উত্তর খিলগাতি গ্রামের মাসুদ রানা (২৩) গুরুতর আহত হলে তাকে মধুপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে লতিফ বাহিনির লোকজন হুমকি দিলে বাড়িতে এসে পরের দিন সে মারা যায়।

জানতে চাইলে মধুপুর উপজেলার আলোকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল তালুকদার বর্তমানকে বলেন, ইউপি মেম্বার লতিফের বিরুদ্ধে মেয়েলি বিষয় নিয়ে শালিশ বসে। ২/৩ হাজার লোকের উপস্থিতিতে ঘন্টা খানেক অভিযোগের পর্য্যালোচনা করি। এতে কোন প্রমাণ পাওয়া গেল না। পরে বাদী বিবাদী একমত হলে তাদেরকে আপোষরফা করে দিলাম। এরই মধ্যে একটু দূরে গন্ডগোল বাঁধে আমরা চলে আসি। এদিকে প্রভাবশালী ইউপি মেম্বার এ মামলাটিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন