পিএনএস ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের খানপুর থেকে আটক যে যুবক নিজেকে মিয়ানমারের নির্যাতিত ‘রোহিঙ্গা’ দাবি করেছিল তার প্রকৃত বাড়ি ফতুল্লায়। সে ফতুল্লার কাশীপুর হোসাইনিনগর এলাকার মোক্তার হোসেনের ছেলে। তার নাম মাহাবুব। অথচ সে নিজেকে ‘রোহিঙ্গা’ আবদুল্লাহ নাম পরিচয় দিয়েছে।
শনিবার রাতে শহরের খানপুর এলাকা থেকে তাকে উদ্ধারের পর রাতেই ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে পুলিশ প্রহরায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। তবে পথিমধ্যে পুলিশ প্রকৃত ঘটনা টের পেয়ে আবারও রাতে তাকে থানায় নিয়ে আসে। তখনই বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক তথ্য।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি শাহীন শাহ পারভেজ জানান, তিনজন পুলিশ প্রহরায় মাহাবুবকে কক্সবাজার নিয়ে যাওয়ার পথে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসতে থাকে। তখন জানাজানি হয় তার নাম মাহাবুব। বাড়ি ফতুল্লার কাশীপুরে। পরিবারের লোকজন এসে তাকে শনাক্ত করে।
ওসি আরও জানান, মাহাবুব মানসিক প্রতিবন্ধী। তার বাবার জিম্মায় তাকে দেয়া হয়েছে।
এদিকে কাশীরপুর হোসাইনিনগর পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শাহআলম জানান, হোসাইনিনগর এলাকায় বসবাস করেন মোক্তার হোসেন। তার এক ভাই আক্তার হোসেন বোবা। আর মাহাবুবও মানসিক প্রতিবন্ধী। এর আগে কখনও সে নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার, কখনও ডাক্তারের ছেলে পরিচয় দিত। আগেও কয়েকবার সে এ ধরনের প্রতারণা করেছিল। এবারও করেছে।
যা নাটক করেছিল মাহাবুব :
১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় শহরের খানপুর এলাকায় ঘুরাফেরা করার সময় গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশ তাকে আটক করে। পরে সে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা থেকে এসেছে বলে পুলিশকে জানায়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ও ভীত থাকায় রাতেই তাকে খানপুরের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই সময়ে মাহাবুব নিজেকে ‘আব্দুল্লাহ’ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘মা, বাবা ও বোনসহ আমরা ৪ জন ছিলাম। কিছুদিন আগে বৌদ্ধ ও মিয়ানমার সেনাবাহিনী মা ও বাবাকে কুপিয়ে ও গুলি করে মেরে ফেলেছে। ১২ বছরের ছোট বোনকেও ছাড়েনি। ওকে প্রথম হাত পা কেটে ফেলে। পরে গুলি করে মারে। আমাকে গলায় চাকু দিয়ে আঘাত করে। শরীরে আঘাত করে।’ কথাগুলো বলতে বলতে সে শরীর বিভিন্ন অংশ দেখায়। তার মধ্যে গলায়, বুকে, পিঠে ও পায়ে বিভিন্ন ছুরির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মাহাবুব আরও বলেছিলেন, যখন তাকে মারতে আসে সেও একজনকে গুলি করে পালিয়ে চলে আসে। প্রথমে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ, পরে সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে নারায়ণগঞ্জে আসে। তবে ট্রেনের টিকিটের টাকা পরিশোধ ও নারায়ণগঞ্জে আসার রাস্তার বর্ণনা দিতে পারেনি।’
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার তাহমিনা নাজনীন বলেন, ‘ওই যুবকের শরীরে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন আছে। শরীরে যেসব আঘাতের চিহ্ন আছে সেগুলোও অনেক দিন আগের।’
পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম
আটক ‘রোহিঙ্গা’ যুবকের দিনভর নাটক
18-09-2017 02:10AM