ফানুসের টাকায় ত্রাণ পাবে রোহিঙ্গারা

  19-09-2017 12:46AM

পিএনএস ডেস্ক: প্রবারণা পূর্ণিমায় এবার রাতের আকাশ জুড়ে থাকবে না আলোকোজ্জ্বল ফানুস। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় এ উৎসবে ফানুস না জ্বললেও, জ্বলবে সর্বহারা রোহিঙ্গাদের আশার আলো। কারণ ফানুস উৎসবের টাকায় কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গাশিবিরে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।

মিয়ানমারে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়নের প্রতিবাদে এবার প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উৎসব না করার ঘোষণা দিয়েছে দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় 'বাংলাদেশের সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ'।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে 'সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের' মুখ্য সমন্বয়ক অশোক বড়ুয়া বলেন, 'দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় এ বছর আপামর মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মিতা ও সমবেদনা জানিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উত্তোলন থেকে বিরত থাকবে।'

তিথি অনুযায়ী আগামী ৫ অক্টোবর এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশের প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণায় ফানুস ওড়ানো হয়। ফানুস উড়ানো ধর্মীয় অনুষঙ্গ হলেও সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এতে অংশগ্রহণ করে এবং এটি একটি সার্বজনীন উৎসব।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এ বছর প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উত্তোলনের ধর্মীয় আচার থেকে বিরত থাকতে 'সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের' আহ্বায়ক সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরু বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে নির্দেশনা দিয়েছেন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট সেনা-পুলিশের ৩০টি চৌকিতে হামলার পর দমন-পীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর প্রাণভয়ে স্রোতের মতো বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। এরইমধ্যে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার শিশু বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাকারী সংগঠনগুলোর জোট ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)।

সংবাদ সম্মেলনে রাখাইনের দুর্বিষহ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে যেন কোন প্রকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি না হয় সেজন্যও সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়।

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে বলা হয়, 'মিয়ানমারের চলমান ঘটনাবলী গৌতম বুদ্ধের অহিংস বাণীর পরিপন্থি।

মিয়ানমার সরকারের প্রতি তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে এ নির্যাতন বন্ধেরও আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরু বলেন, 'আমরা বৌদ্ধধর্মীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফেলোশিপ অফ বুড্ডিস্টসহ (ডব্লিউএফবি) বিশ্ব সম্প্রদায়ের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজতে তাদের অনুরোধ জানিয়েছি। বাংলাদেশের শান্তিকামী জনতার সাথে আমাদেরও দাবি, মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধ হোক।'

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে 'সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ'। পরে ১০ সেপ্টেম্বর 'সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ' ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসে এক স্মারকলিপি দেয়। এতে অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে বুদ্ধের অহিংসনীতির অনুসরণে সমস্যার সমাধানের দাবি জানানো হয়।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন