এক তরুণের স্বপ্ন যেভাবে পুড়িয়ে দিলেন সু চি

  16-10-2017 08:46AM


পিএনএস ডেস্ক: রো মাইয়ু আলী। ২৬ বছর বয়সী রোহিঙ্গা তরুণ। স্বপ্ন ছিল লেখক হওয়া। এগোচ্ছিলেন সেভাবেই। নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন প্রিয় পাঠাগার। সেনাদের আগুনে পুড়ে গেছে সেই গ্রন্থশালা, ছাই হয়ে গেছে স্বপ্ন। এখন থাকেন কক্সবাজারের কুতুপালং আশ্রয় ক্যাম্পে। সেখান থেকে আলজাজিরার মাধ্যমে লেখা এক খোলা চিঠিতে রাখাইন সঙ্কটের জন্য তিনি দায়ী করেছেন মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি কে। তার কাছে অনেকগুলো প্রশ্ন রেখে রোহিঙ্গা তরুণ মন্তব্য করেছেন, ইতিহাসে একজন সামরিক জান্তার সমান্তরালেই উচ্চারিত হবে সু চির নাম।

এখানে চিঠির বিস্তারিত উপস্থাপন করা হলো :
যে বছর আপনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান, আমার জন্ম সেই বছরেই। আমাদের দেশের (মিয়ানমার) যে কারো পাওয়া সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার এটি। রাখাইন রাজ্যের মংডুতে আমার জন্ম। আমরা সবাই সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল যেন আমরা নিজেরাই পুরস্কার পেয়েছি। বছরের পর বছর সামরিক জান্তার অত্যাচারে নিষ্পেষিত মানুষ আপনার পুরস্কার পাওয়ায় নতুন করে উৎসাহ পায়, স্বপ্ন দেখা শুরু করে। ওই ঘটনায় প্রথমবারের মতো আমরা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে আমরা গর্ববোধ করেছিলাম। প্রথমবারের মতো মনে হয়েছিল, আমরা মিয়ানমারের মানুষ।

সব সময় আপনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন আমার দাদা। আপনার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির লোকজন যখন আমাদের বাড়িতে আসত, তখন তিনি (দাদা) সবচেয়ে ভালো ছাগল ও গরু জবাই করতেন। তিনি খুব উৎসাহ ভরে তাদের স্বাগত জানাতেন। নির্যাতিতদের পক্ষে আপনার সোচ্চার কণ্ঠস্বর আকৃষ্ট করেছিল আমার মাকেও। বাবা ও প্রিয় দাদা চেয়েছিলেন যেন আমি আপনার পথ অনুসরণ করি।

২০১০ সালে সামরিক বাহিনী যখন আপনাকে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেয় তখন আমরা খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু মাত্র সাত বছরের মাথায় আমরাই, সেই রোহিঙ্গারা, বর্বরতা ও গণহত্যার শিকার হলাম। তাও আবার আপনারই হাতে। ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আপনি দল থেকে মুসলিম নেতাদের (প্রতিনিধি) বের করে দিলেন। তখনই আপনার রাজনৈতিক ভীরুতা উন্মোচিত হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই আপনার প্রশাসন উত্তর রাখাইন রাজ্যে ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান শুরু করল। এই কয়েক মাসে অসংখ্য বেসামরিক লোককে হত্যা করা হয়েছে এবং অসংখ্য নারী সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিপুল নিন্দা সত্ত্বেও আপনি সেই অপরাধের কথা স্বীকার করেননি।

এমনকি আপনি আমাদের রোহিঙ্গা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অথচ আমরা যুগের পর যুগ এই রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছি এবং ‘রোহিঙ্গাই’ আমাদের জাতিগত পরিচিতি। গত ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর থেকে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ পালিয়ে এসেছে। এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর জ্বালিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন