বরিশালে ২৫ হাজার বাসিন্দা বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে !

  19-10-2017 09:47PM

পিএনএস, বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে দুটি ওয়ার্ডে ভয়াবহ রকমের বিদ্যু সংকট দেখা দিয়েছে। উভয় ওয়ার্ডে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সংযোগের নীতিমালার বাধ্যবাধকতার কারণে কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষ রয়েছে বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে। খুব শীঘ্রই বিদ্যুৎ সাংযোগ পাবে না তারা বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ অফিস এবং নগর ভবন। ফলে ওই ২৫ হাজার নিন্মবিত্ত পরিবারের লোকদের ভোগান্তির শেষ নেই। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছেন লোকসানে। ত্রাহি দশায় শিশু ও বৃদ্ধরা।

এ অবস্থা চলতে থাকলে বরিশাল নগর উন্নয়নে বিরুপ প্রভাব পরবে। স্থানীয়ভাবে সকল ধরনের চেষ্টা করে হতাশ হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। সাধারণ পৌরসভা থেকে ২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নিত করা হয় বরিশালকে। বর্তমানে কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস এই নগরীতে। ওয়ার্ড সংখ্যা ৩০টি। এই ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুটি অংশে সিটি করপোরেশন গঠনের পর থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। এর মধ্যে ০৯ নং ওয়ার্ডের রসুলপুর চর/বস্তি এবং ২৬ নং ওয়ার্ডের চরজাগুয়া।

চরজাগুয়ায় ২০০২ সাল থেকে বর্তমান অর্থাৎ এই ১৫ বছরে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। আর রসুলপুরে ৩১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ওয়েস্ট জোন ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী (ওজোপাডিকো)। নগর ভবন সূত্র জানিয়েছে, রসুলপুরে কমপক্ষে ২২/২৩ হাজার বাসিন্দা বসবাস করছে। ওদিকে চরজাগুয়ায় আড়াই হাজার বাসিন্দা বসবাস করে থাকে। এই বিশাল অঙ্কের মানুষেরা প্রান্তিক জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আর সেই কারণেই বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সরকারী কর্মকর্তারা।

চরজাগুয়ার বাসিন্দা জব্বার হাওলাদার, সুলতান হাওলাদার, কুদ্দুস, সুলতান ও মিলন অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ দিবে এমন আশ্বাসে সাবেক কাউন্সিলর হুমায়ূন কবিরকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন তারা। ওই কাউন্সিলর আশ্বাস দিয়েছিল ৩ মাসের মধ্যে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ এনে দিবে। কিন্তু তিন বছরেও তার আর দেখা মেলেনি। ওই বাসিন্দারা বলেন, এমনিতেই বরিশাল সিটি করপোরেশনের মূল যে ভূখন্ড সেখান থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে চরজাগুয়ার অবস্থান।

কাউন্সিলরের কাছ থেকে চারিত্রিক সনদ আনতে গেলে ঝালকাঠি জেলা ও নলছিটি উপজেলা ঘুরে বরিশাল নগরীতে প্রবেশ করতে হয়। এই বিচ্ছিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় রাত নামলেই চোর-ডাকাতেরা হানা দেয়। অথচ নগর ভবনে নিয়মিতই শহরের মত নির্ধারিত জমির খাজনা, পানি বিল, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করে থাকেন তারা। ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে কীর্তনখোলা নদীর একটি শাখা নদী বয়ে গেছে। এই নদীর উভয় পারের প্রায় আড়াই হাজার মানুষ বিদ্যুৎতর আওতায় নেই। বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য আমরা আদালতে মামলাও করেছি। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ‘দেই দিচ্ছি’ বলে টালবাহানা করলেও তারা দিচ্ছে না। এই ওয়ার্ডের একটি চরজাগুয়া। তারা সিটি করপোরেশনের জন্মলগ্ন থেকেই বিদ্যুৎ পায়নি।

আগামী দু-চার-দশ বছরে বিদ্যুৎ পাবে এমন কোন নিশ্চয়তার বার্তাও নেই এই জনপ্রতিনিধির কাছে। এদিকে রসুলপুর বস্তিতে যে ২৩ হাজার মানুষ বসবাস করেন তারাও ৩১ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুৎহীন। জানা গেছে, সিডিসি ক্লাস্টারের মাধ্যমে সাবেক মেযর শওকত হোসেন হিরন একটি মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছিল রসুলপুরে। ওই একটি মিটার থেকে সর্বশেষ সাড়ে ৪শ’ সাব-মিটার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযুক্ত ছিল রসুলপুরে। কিন্তু সম্প্রতি ওজোপাডিকো সিস্টেম লস দেখিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এ বিষয়ে ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ হারুন-অর-রশিদ বলেন, রসুলপুরের মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ পোহাতে হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সিডিসি ক্লাস্টারের মাধ্যমে সংযোগ দিলেও প্রতি মাসে ইউনিট বর্হিভূত ৭০-৮০ হাজার টাকা অতিরিক্ত বিল হতো। এই টাকা পরিশোধ করতে পারতো না নিন্মবিত্ত বাসিন্দারা। হারুন-অর-রশিদ বলেন, শহরের গস্খাহকরা প্রতি ইউনিট ৬ টাকা হারে বিল পরিশোধ করলেও খেটে খাওয়া এসব মানুষকে ১০টাকা ৪৫ পয়সা হারে ইউনিট বিল পরিশোধ করতে হতো। তার উপরে ৭০/৮০ হাজার টাকা ভূতুরে বিল। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত বকেয়া হওয়ায় ওজোপাডিকো সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তিনি বিষয়টির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

হারুন-অর-রশিদ বলেন, মানবিক দৃষ্টিতে হলেও রসুরপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া উচিত। এই কাউন্সিলর আরও বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর আমরা ওজোপাডিকোর নির্দেশে ১০০ আবেদন দেই এবং তাদের দাবীকৃত মিটার প্রতি ১০হাজার টাকা জামানত দেবার চুক্তি ক্ততে রাজি হই। কিন্তু খুলনা থেকে আমাদের আবেদন প্রত্যাখান করা হয়। ওজোপাডিকো-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমূল্য কুমার সরকার বলেন, বর্তমানে রসুলপুরের মিটারে ৬ লাখ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। নিয়ম অনুসারে বকেয়া বিল থাকলে ওই মিটারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের জন্য কিছু আইন রয়েছে। যারা ভূমিহীন তারা নিজের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারে না। কারন বিল বকেয়া হলে এবং ওই ভূমিহীনরা স্থান ত্যাগ করলে তা আদায় করার আর কোন উপায় থাকে না। যেহেতু রসুলপুরের বাসিন্দারা ওই জমির মালিক না। তাই তাদের নিজ নামে মিটার দেয়া নিয়মতান্ত্রিক নয়। এই কমৃকর্তা বলেন, খুব শীঘ্রই রসুলপুর বস্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কোন উপায় নেই।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন