মংলা বন্দরের আউটার বারের ড্রেজিংয়েরদরপপত্রের আহব্বান ডিসেম্বারে

  18-11-2017 08:04PM

পিএনএস, টুটুল গাজী (মংলা) : মংলা বন্দর চ্যানেলের অ্যাংকোরেজে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আউটার বার এলাকায় নাব্যতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ জন্য ডিসেম্বর মাসেই আহবান করা হবে দরপত্র।কয়েক বছর ধরেই মংলা বন্দরের আউটার বারে (বহিঃনোঙর) ডুবোচরে পণ্য নিয়ে আটকে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ। বড় ধরনের যেসব জাহাজ বেশি গভীরতায় চলে সেগুলো আসতে পারছে না। যেসব জাহাজ ডুবোচরে আটকে যায়, ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে সেসব জাহাজ থেকে অর্ধেক পণ্য খালাস করা হয়। পরে ডুবোচর থেকে সেসব বড় জাহাজকে সরিয়ে আনা হয়। ফলে চ্যানেলটি প্রায় বন্ধই হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।

সমাধানের উপায় খুঁজতে চ্যানেল ড্রেজিং করার পরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। বন্দরের আউটার বারে ড্রেজিং করার জন্য ৭১২ কোটি টাকার একটি ড্রেজিং প্রকল্পে গত ১৪ নভেম্বর অনুমোদন দেয় একনেক। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর ফারুক হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আগামী মাসে এ ড্রেজিংয়ের টেন্ডার আহ্বান করা হবে।

মংলা বন্দরের হারবার সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে মংলা বন্দর জেটি পর্যন্ত পশুর নদের চ্যানেলের দৈর্ঘ্য ১৩১ কিলোমিটার। সাগর থেকে পশুর নদে ঢোকার সময় ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় অব্যাহতভাবে পলি পড়ে নদের গভীরতা কমে গেছে। নাব্য সংকটের কারণে ফেয়ারওয়ে বয়া পর্যন্ত জোয়ারের সময় ৮ থেকে সাড়ে ৮ কিলোমিটার ড্রাফটের (গভীরতা) বিদেশি জাহাজ আসতে পারে। আর ভাটার সময় সাড়ে ৭ মিটার ডেপথের জাহাজ আসতে পারে।

বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার ওলিউল্লাহ বলেন, ‘আউটার বারে নাব্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেখানে ড্রেজিংয়ের জন্য চার বছর আগে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেবার অনুমোদন না মেলায় ড্রেজিং করা যায়নি।’

মংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির মহাসচিব মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ‘নাব্য সংকটের কারণে আউটার বারে বিদেশি জাহাজ রেখে মালপত্র বোঝাই ও খালাস করতে হয়। এর ফলে লাইটার জাহাজ সেখানে নিয়ে পণ্য বোঝাই-খালাসে বেশি সময় লাগে। এতে বন্দর ব্যবহারকারী ও জাহাজ মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আউটার বার পর্যন্ত জোয়ারের সময় সাড়ে ৮ মিটার ডেপথের জাহাজ আসতে পারে। কিন্তু বিদেশি অনেক জাহাজ রয়েছে যেগুলো ৯ ও ১০ মিটার গভীরতার। সে জাহাজগুলো চট্রগ্রাম বন্দরে চলে যায়। ছোট জাহাজের তুলনায় বড় জাহাজে পণ্য আমদানি রফতানিতে খরচ তুলনামূলক কম হয়। সে কারণে সে অঞ্চলের অনেক আমদানি-রফতানিকারকও চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে বাধ্য হন।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এইচ এম দুলাল জানান, আউটার বারে ড্রেজিং না হওয়ায় বন্দর ব্যবহারকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া নাব্য সংকটের কারণে অনেক মালিক এ বন্দরে জাহাজ পাঠাতে চান না।

আউটার বার এলাকায় নব্বইয়ের দশকে ওশান ওয়েভ নামের একটি বিদেশি বড় জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। এছাড়া বন্দরের চ্যানেলে বিভিন্ন সময় এম ভি পাবলিনাসহ আরও ১৭টি দেশি-বিদেশি জাহাজ ডুবে যায়। এ ১৮টি জাহাজের মধ্যে ৫টি রয়েছে বিদেশি বড় জাহাজ। ডুবন্ত এসব জাহাজের কারণে পলি পড়ে পশুর নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। এ অবস্থায় চ্যানেলে ড্রেজিং করতে পরিকল্পনা হতে নেওয়া হয়।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর ফারুক হাসান বলেন, ‘গত ১৪ নভেম্বর ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে আউটার বারে ড্রেজিং প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনীতি কমিটি (একনেক)। আগামী মাসে এর টেন্ডার আহ্বান করা হবে। আউটার বারে ড্রেজিং করা হলে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মংলা বন্দরে অনায়াসেই ঢুকতে পারবে। জাহাজ আসার সংখ্যাও বাড়বে। রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি-রফতানিও বাড়বে।

মংলা বন্দর চ্যানেলের অ্যাংকোরেজে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আউটার বার এলাকায় নাব্যতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য ডিসেম্বর মাসেই আহবান করা হবে দরপত্র।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন