নাসিরনগরের হরিপুরে মন্দির ভাংঙ্গার আসামীদের নিয়ে সস্প্রীতির উৎসব!

  20-02-2018 04:39PM

পিএনএস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মোঃ রাকিবুর রহমান রকিব : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা হরিপুর গ্রামে গত শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সস্প্রীতি রক্ষার নামে মন্দির ভাঙ্গা আসামীদের নিয়ে বেসরকারী সংস্থা দ্যা হাঙ্গার প্রজেক্ট আয়োজিত আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনুষ্ঠানকে তামাসা ও প্রহসনের অনুষ্ঠান বলে আখ্যায়িত করেছেন নাসিরনগর উপজেলার স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।

হামলার এক বছর পর এই সম্প্রীতির অনুষ্ঠান নিয়েও তারা নানা প্রশ্ন তোলেন। নাসিরনগরের হামলার একবছর পর গত শনিবার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর জমিদার বাড়িতে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট দিনব্যাপী সম্প্রীতি উৎসবের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ও দ্যা হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলমমজুমদার।

সম্প্রীতি উৎসব সম্পর্কে নাসিরনগর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল জ্যোতিদত্ত জানান, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে অনুষ্ঠানের বিষয় জানতে পেরেছি মন্দির ভাংচুর মামলার আসামী হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফারুক মিয়া ও ইউনিয়ন বিএনপির উপদেষ্টা সাবেক চেয়ারম্যান জামাল মিয়াকে নিয়ে সম্প্রীতির নামে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) অনুষ্ঠান করেছে। এক বছর পর তারা কি উদ্যোশে অনুষ্ঠানটি করেছে তা আমার বোধগম্য হচ্ছেনা।

তিনি জানান,ঘটনার পর পরই আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে নাসিরনগর সদরে সস্প্রীতির অনুষ্ঠান করবো বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু সমালোচনা হতে পারে এমন আশংকা থেকে আমরা নাসিরনগর সদরে অনুষ্ঠানটি করিনি। তা থেকে বিরত ছিলাম। অথচ এক বছর পর যখন সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে চলছিল তখন মন্দির ভাংচুর মামলার আসামীদের নিয়ে তারা (সুজন) অনুষ্ঠান করেছে। এঘটনাকে দু:খ জনক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হিসেবে এটা মেনেনিতে পারছিনা। নাসিরনগর উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্ট্রান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক সুজিত কুমার চক্রবর্তী জানান, সম্প্রীতির নামে মন্দির ভাংচুর মামলার আসামীদের নিয়ে এক মঞ্চে উঠে তারা এক ধরনের তামাসা করেছে। এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত হয়েছি। এ ধরনের ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।

নাসিরনগর কেন্দ্রীয় গৌর মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চৌধুরী জানান, এই অনুষ্ঠানটি এক কথায় এক ধরনের প্রহসন। অনুষ্ঠানের সত্যতা নিশ্চিত করে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আবু জাফর জানান, হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফারুক মিয়া ও ইউনিয়ন বিএনপির উপদেষ্টা জামাল মিয়া উভয়েই মন্দির ভাংচুর হামলা মামলার আসামী। সময় মতো আদালতে তাদের নাম সহ পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। অনুষ্ঠানের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অনুষ্ঠানের আয়োজক দ্যা হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও সুশানসের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ও ড. বদিউল আলম মজুমদার জানান, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সবাইকে একত্র করার চেষ্টা করেছি। কাউকে চিহ্নত করে অনুষ্ঠানে ধরে আনাহয়নি। তিনি আরো বলেন, আসামী হতে পারে।

আসামী হলে কেউ দোষী হয়ে যায়না। আমরা কোনো আসামীকে পুন:বাসন করার চেষ্টা করিনি। আবার দোষীকে আরো দোষদিতে চাইনি। নাসিরনগরে যে দু:খ জনক ঘটনা ঘটেছে, এটার আমরা ইতি টানার চেষ্টা করেছি কেবল। আমরা চাই হিন্দু -মুসলমান সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একত্রে যেন বসবাস করতে পারে এটাই আমাদের লক্ষ্য। অনু্ষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে সালমা, বৃটিশহাইকমিশনের গভর্ন্যান্স টিম লিডার এ্যাসলিন বেকার, পেইভের রূপকার অ্যালিস্টার লেগ, দ্যা হাঙ্গার প্রজেক্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈকত শুভ্র আইচ।

সম্প্রীতি উৎসবে হরিপুর স্থানীয় মন্দিরের পুরোহিত সবুজ চক্রবর্তী আলিয়া মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডকে পবিত্র কোরআন উপহার দেন এবং আলিয়া মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ড পুরোহিত সবুজ চক্রবর্তীকে পবিত্র গীতা উপহার দেন। এসময় অতিথিদের সাথে মঞ্চে মন্দিরে হামলা মামলার আসামী হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়া ও ইউনিয়ন বিএনপির উপদেষ্টা জামাল মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমানবার ছবি পোস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাসিরনগর উপজেলা সদর ও হরিপুর গ্রামের হিন্দু পল্লীর মন্দির ও অর্ধশতাধিক ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে দুস্কৃতিকারীরা। এঘটনায় মোট ৮টি মামলা দায়ের করাহয়। এসব মামলায় পুলিশ ১২৪ জন আসামীকে গ্রেপ্তার আদালতে পাঠায়। পরে সবাই এখন জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় নিজ নিজ অবস্থানে আছেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন