‘হুমকির মুখে সাত লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু’

  24-02-2018 02:10AM

পিএনএস ডেস্ক: আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুমকে সামনে রেখে হুমকির মুখে রয়েছে সাত লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু। এর মধ্যে আনুমানিক পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার শিশুর বাস বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে। এক লাখ ৮৫ হাজারের আবাস মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমে বিপাকে পড়বে এই শিশুরা।

কেননা, এ সময়ে বন্যায় জরাজীর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো প্লাবিত হতে পারে। এতে সেখানে পানিবাহিত রোগের উপদ্রব বাড়বে। বন্যার কারণে ক্লিনিক, শিক্ষাকেন্দ্র ও শিশুদের জন্য চালু করা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বন্যার বাইরে বাড়তি হুমকিতে পড়বে রাখাইনে এখনও যেসব রোহিঙ্গারা মাটি কামড়ে পড়ে আছেন তাদের পরিবারের শিশুরা। কেননা, রাখাইনে এখনও সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। ফলে দুনিয়ার সবচেয়ে নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুক্রবার জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

ইউনিসেফের জরুরি কর্মসূচির পরিচালক ম্যানুয়েল ফন্টেইন বলেন, ‘প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মূলত আটকে পড়েছে। তারা হয় সহিংসতার মধ্যেই মিয়ানমারের বাসস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে কিংবা দেশে ফিরতে না পারার ফলে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে অসহায়ের মতো ঘুরছে। অথচ এই সংকটের কোনও দ্রুত সমাধান নেই। সংকটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতির উত্তরণে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।’

ম্যানুয়েল ফন্টেইন বলেন, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা, নাগরিকত্ব, সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর সুযোগসহ সুন্দর ভবিষ্যতের সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা বাড়ি ফিরবে না।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগ এবং মানবিক সহায়তার মতো বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ইউনিসেফ। সহিসংতা বন্ধ করা এবং রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

রাখাইনের অনেক স্থানে ইউনিসেফসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার না থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, অবিলম্বে এসব শিশুদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশে সরকারের নেতৃত্ব ও নজরদারিতে বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে স্থানীয়রা ৭৯ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। বিপন্ন এই জনগোষ্ঠীর মানুষদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে ইউনিসেফ।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় অধিবাসীরাও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশিরা মিলিয়ে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে।

উদ্বাস্তু ও স্থানীয় জনগণকে যথাসম্ভব ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন হু’র আঞ্চলিক প্রধান। তবে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থী আর স্থানীয় জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দাতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

ডব্লিউএইচও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, বর্ষাকালের আবহাওয়া, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ডায়রিয়া ও হেপাটাইটিসের মতো পানিবাহিত রোগ এবং ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো সংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে তুলবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম’ চালু করেছে। এতে মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আগেই দ্রুত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারীদের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে তারা।

ডব্লিউএইচও’র ধারণা, আগামী বছরে আনুমানিক ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নেবে। তাদের জন্য বিশেষ সুরক্ষার দরকার পড়বে। এছাড়া সাধারণ আঘাতের চিকিৎসাসহ হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের জন্যও চিকিৎসা সেবার বন্দোবস্ত করা দরকার। মানসিক স্বাস্থ্য সেবাও তাদের জন্য প্রয়োজনীয়। সুস্থতার পূর্বশর্তগুলো নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে ক্ষেত্রপাল বলেন ,‘পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও বাসস্থানের সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এরকম পরিবেশে খুব সহজেই সংক্রামক ও পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

ডব্লিউএইচও বলছে, ঝুঁকির মধ্যে থাকা কক্সবাজারের জনগোষ্ঠী এখনও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সেবাগুলো পাওয়াও তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন