উত্তরাঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে মহিষ

  24-02-2018 07:37PM

পিএনএস, জয় সরকার : উত্তরাঞ্চলে মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র না থাকায় মহিষের বংশ বিস্তার স্থবির হয়ে পড়েছে। এদিকে, বংশ বিস্তার স্থবির, খাদ্য মূল্য বেশি ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এ অঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে মহিষ। গত ৩০ বছরের ব্যবধানে এ অঞ্চলে মহিষের সংখ্যা ৪০ লাখ থেকে নেমে শুধুমাত্র ২৯ হাজারে দাঁড়িয়েছে। আর এভাবে চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই উত্তরাঞ্চল থেকে পুরোপুরি ভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে মহিষ। মহিষকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার করতে উত্তরাঞ্চলে দ্রুত কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

রংপুর প্রাণী সম্পদ বিভাগের পরিসংখ্যান মতে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় মোট গবাদী পশু রয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার ৯’শ ৫১টি। এর মধ্যে গরু ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার ১’শ ৫৩টি, ছাগল ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৩’শ ৪৮টি, ভেড়া ৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮’শ ৮৯টি এবং মহিষ ২৯ হাজার ৫’শ ৬১টি। অথচ গত ৩০ বছর আগে এ অঞ্চলে মহিষ ছিলো ৪০ লাখের উপর। বর্তমানে বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে সবথেকে বেশি মহিষ রয়েছে দিনাজপুরে এবং সবচেয়ে কম রয়েছে পঞ্চগড়ে।

জানা যায়, দুধ ও মাংস দিয়ে মহিষ দীর্ঘকাল ধরে এ অঞ্চলের মানুষের আমিষ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে আসছে। মহিষ গরুর চেয়ে অনেক বেশি দুধ দেয় এবং গরুর মাংসের তুলনায় মহিষের মাংস বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। শুধু খাদ্যের দিক থেকে নয়, মহিষ মানুষের নানাবিধ কাজে সাহায্য করে। জমিতে ফসল উৎপাদনের জন্য মহিষের তৈরী হাল দিয়ে জমি চাষ আধুনিক পাওয়ার টিলার অপেক্ষা শতগুণ ভালো। কিন্তু কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র না থাকায় বংশবিস্তার স্থবির হয়ে পড়েছে। এছাড়া খাদ্য মূল্য বেশি ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এ অঞ্চল মহিষ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

খাদ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, গরুর তুলনায় মহিষে মাংসে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। তাছাড়া মহিষের মাংস গরুর তুলনায় কম চর্বিযুক্ত। মহিষের মাংস গরুর তুলনায় কিছুটা শক্ত, তবে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। উভয় মাংসের স্বাদ প্রায় একই রকম হলেও মহিষের মাংসে তুলনামূলক অনেক বেশি প্রোটিন থাকে। মহিষের মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ মুরগির চেয়েও কম। গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণ ১৫-২০ শতাংশ হলেও মহিষের মাংসে তা মাত্র ২ শতাংশ।

অপরদিকে, মহিষের দুধে কোলেস্টেরল কম, ক্যালরি বেশি, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বিজাতীয় উপাদানও গরুর দুধের তুলনায় মহিষে শতভাগ বেশি। কম কোলেস্টেরল, অধিক প্রোটিন, অধিক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ভিটামিনের উপস্থিতি থাকায় মহিষের দুধ গরুর তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যসম্মত।

সরেজমিনে বিভাগের বিভিন্ন জেলার মহিষ পালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের মাঝে মহিষ পালনের আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু মহিষের খাদ্যের দাম বেশি ও সময় মতো প্রজনন না হওয়ায় তারা মহিষ পালনে আগ্রহ হারাচ্ছে। অনেক মহিষ খামারি পেশা বদল করে অন্য পেশায় যোগ দিয়েছেন। রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিষ পালক হোসেন মকবুল জানান, তার বাড়িতে এক সময় ৫টি মহিষ ছিলো। এর মধ্যে ২ মহিষ দিয়ে জমি চাষ ও বাকি মহিষের দুধ বিক্রি করে যে টাকা আসতো তাতে তার সংসার চলতো। কিন্তু বর্তমানে খাদ্য মূল্য বেশি, দীর্ঘদিন প্রজনন না হওয়ায় এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় মহিষগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের গণেশ শাহাপাড়া গ্রামের মহিষ খামারী সবুজ মিয়া জানান, আমার খামারে একসময় ১৫টি মহিষ ছিলো। নিয়মিত এসকল মহিষের দুধ বাজারে বিক্রি করে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছি। কিন্তু বর্তমানে মহিষের খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় মহিষগুলো থেকে প্রাপ্ত দুধ বাজারে বিক্রি করেও মহিষগুলোকে পর্যাপ্ত খাদ্য দিতে পারি না, লাভ তো দূরের কথা। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কোনো মহিষ গর্ভধারণ না করায় মহিষগুলোকে বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমানে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছি।

রংপুর বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রংপুর বিভাগে মহিষের কোনো কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র নেই। মহিষের বংশ বিস্তারের জন্য এবং মহিষকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য উত্তরাঞ্চলে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, ঢাকায় অবস্থিত কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র থেকে সারাদেশের প্রজেক্ট এরিয়ায় মহিষের কৃত্রিম বিচ সরবরাহ করা হয়। এই বিচ দিয়ে কৃত্রিম প্রজনন ঘটানো হয়। কিন্তু রংপুর বিভাগ এই প্রজেক্ট এরিয়ার আওত্তাভুক্ত নয়। তাই এ অঞ্চলে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মহিষের প্রজননের কোনো ব্যবস্থা নেই।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন