লক্ষ্মীপুরে মোঘল অামলের ‘পর্তুগিজ জাহাজের সন্ধান, ধন-রত্ন ভরা!

  20-04-2018 02:49PM

পিএনএস ডেস্ক : লক্ষ্মীপুরে মাটি চাপা পড়ে থাকা প্রায় দুইশ বছরের পুরনো ‘পর্তুগিজ জাহাজের‘ সন্ধান মিলেছে। রামগতি উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের চরআফজল গ্রামে স্থানীয় এক ব্যক্তি পুকুর খনন করতে গিয়ে জাহাজের ‘মাস্তুলের’ দেখা পাওয়া যায়।

এ নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের ধারণা, প্রায় দুইশ বছর আগে প্রমত্তা মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজ এটি। তারা বলছেন, পর্তুগিজদের ব্যবহৃত জাহাজ এটি। এতে ধনরত্ন ও অস্ত্রসস্ত্রসহ মূল্যবান সম্পদ থাকতে পারে। মাটি খুঁড়ে জাহাজ পাওয়ার খবর লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন লোকজন দেখতে ভিড় করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিন বছর আগে নদী ভাঙনের শিকার মাহফুজ নামের এক ব্যক্তি চরআফজল গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করেন। পরিবারের ব্যবহারের জন্য তিনি সম্প্রতি বসত ঘরের পাশে পুকুর খনন করছিলেন। এক পর্যায়ে দেখা মেলে জাহাজের মাস্তুলের। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে।

মাহফুজের ছেলে মো. হেলাল জানান, পুকুর খননে ১০-১২ফুট গভীরে গেলে জাহাজের মাস্তুল দেখতে পাওয়া যায়। এতে পুকুর খনন শেষ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে খনন কাজ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে অধিক নিশ্চিত হতে মাহফুজ টিউবওয়েল মিস্ত্রি দিয়ে পাইপ বোরিং করায় ঘটনাস্থল এলাকায়। আশেপাশের দুই-তিন শ’ ফুট এলাকা জুড়ে বোরিং করানো হয়। তাতে দেখা যায়, ১২-১৪ ফুট গভীরে গেলে পাইপ আটকা পড়ে। একইভাবে বেশ কয়েকবার আশপাশের কয়েকটি স্থানে বোরিং করে এলাকার লোকজন নিশ্চিত হয়েছেন এটি বিশাল আকৃতির ‘জাহাজ’। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঘটনাস্থলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ দিন ধরে পুকুরের খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। মাটি কাটতে না পারায় পুকুর খনন কাজ বন্ধ রেখেছেন। লোকজন দূর-দূরান্ত থেকে জাহাজের মাস্তুল দেখতে ভিড় করছেন। দেখতে আসা লোকজন মোবাইলে ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলছেন।

বিবিকে পাইলট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু তাহের জানান, প্রায় দুইশ বছর আগে নদী থেকে জেগে ওঠে চররমিজ ইউনিয়ন। পরবর্তীতে এখানে ফসল আবাদ ও বসতি গড়ে ওঠে। তার আগে এই চরসহ রামগতি উপজেলা বিশাল অংশ ছিল উত্তাল নদী। বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে এ নদী ছিল বিশাল বিস্তৃত। এ রুটে তখন নিয়মিত চলাচল করতো বড় আকৃতির জাহাজ। পুর্তগিজদেরও এ পথে যাতায়াত ছিল। সে সময়ে ডুবে যাওয়া জাহাজ হতে পারে এটি।

চর আফজল গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, ‘জাহাজটি’ পর্তুগিজদের হতে পারে। তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় এটি নদীতে ডুবে গেছে। পরবর্তীতে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ জাহাজে মূল্যবান সম্পদ থাকতে পারে।

নোয়াখালীর সূবর্ণচর কলেজছাত্র শরিফ ও আকবর জানায়, খবর পেয়ে তারা জাহাজ দেখতে এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নজর দেওয়া প্রয়োজন। তাদের গবেষণায় জানা যাবে, এটি কি এ

বং এর রহস্য ও ইতিহাস সর্ম্পকে বিস্তারিত।

দৈনিক সংবাদের রামগতি ও কমলনগর প্রতিনিধি সানা উল্লাহ সানু লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব ও ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে একটি বই লিখছেন। জাহাজের সন্ধান প্রসঙ্গে তিনি ধারণা করছেন, ‘এটি মুঘল আমলের পর্তুগিজ কিংবা আরাকান দস্যুদের জাহাজ হতে পারে। রামগতির চর রমিজ নদী গর্ভে থেকে জেগে উঠেছে প্রায় দেড়শ বছর আগে। জাহাজটি তারও আগে নদীতে ডুবে থাকতে পারে।

এ ব্যাপারে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজগর আলী বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে ।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন