বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে উপচেপড়া ভিড়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়

  17-06-2018 07:06PM



পিএনএস ডেস্ক: ঈদের দ্বিতীয় দিন রবিবার গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কটিতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে পার্কের কোর সাফারি অংশে সবচেয়ে ভিড় ছিল। এখানেই রয়েছে উন্মুক্ত পরিবেশে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুকসহ বিভিন্ন প্রাণির অবাধ বিচরণ। নির্দিষ্ট গাড়িতে করে ঢুকতে হয় ওই অংশে। কোর সাফারিতে ঢুকতে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও শিক্ষার্থীদের জন্য জনপ্রতি ৫০ টাকা টিকিট করে নির্ধারিত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঈদের দ্বিতীয় দিনে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার পর্যটক বিনোদনের জন্য পার্কে এসেছেন বলে দাবি কর্তৃপক্ষে। ঈদের দিন এ সংখ্যা ছিল প্রায় নয় হাজার।

রবিবার দুই শিশুপুত্রসহ পরিবারের চার সদস্য টঙ্গী এলাকা থেকে সাফারি পার্কে গেছেন প্রদীপ সরকার। তিনি অভিযোগ করেন, তার পাঁচ ও সাত বছরের দুই ছেলের জন্য কোর সাফারি পার্কের প্রবেশ করতে তাদের সমান অর্থাৎ ১০০ টাকা করেই নেয়া হয়েছে। এছাড়া পার্কে ঢুকতে মূল ফটকেও প্রতিজনের জন্য ৫০ টাকা করে গুণতে হয়েছে।

একই কথা বলেন, মুন্সিগঞ্জ থেকে পার্কে আসা মো. শামীম। তিনি তার স্কুলপড়ুয়া আট বছরের ছেলে নিয়ে গেছেন সাফারি পার্ক ঘুরতে। পার্কের প্রধান ফটকে ঢুকতে এবং কোর সাফারি অংশে প্রবেশ করতে বাচ্চার জন্যও তার সমান টাকায় টিকেট কিনতে হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রীপুর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো ও বাঘ, সিংহ, হাতি, জেব্রা, জিরাফসহ অর্ধ শতাধিক প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণি দেখতে বিভিন্ন বয়সী পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ার মত। কিন্তু শর্ত না মেনে শিশু ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের লোকজন অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। যদিও এ ব্যাপারে পাল অ্যান্ড ব্রাদার্সের গেটের টিকিট ম্যানেজার মো. হাসান মিয়া অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন জানান, সাফারি পার্কে বর্তমানে বড় আকারের বাঘ রয়েছে নয়টি, সিংহ ২০টি, ভাল্লুক ১২টি, জিরাফ ১১টি। এছাড়া মরুভূমির প্রাণি উটপাখি, ক্যাঙ্গারো, কুমির, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রজাপতি দর্শকদের মোহিত করে। কোর সাফারি অংশে দর্শকদের অপেক্ষমাণ দীর্ঘ সারি থাকলেও নেই সেখানে গাড়ি সংকট রয়েছে। সেখানে গাড়ির সংখ্যা বেশি থাকলে লম্বা সারিতে দর্শকদের দাড়িয়ে কষ্ট করতে হত না।


তিনি আরো জানান, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের কোর সাফারি অংশটি নির্ধারিত শর্তানুসারে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য পাল এন্টারপ্রাইজ, বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেড কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাফারি পার্কের এ অংশের ঠিকাদারদের লোকজন চুক্তি না মেনে সকলের কাছ থেকেই প্রবেশ মূল্য বাবদ ১০০ টাকা করে নেয়ার অভিযোগটি সত্য হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই সাফারি পার্কটি ৫টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো- ১. কোর সাফারি। ২. সাফারি কিংডম। ৩. বায়োডাইভার্সিটি পার্ক। ৪. এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক। ৫. বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।

কোর সাফারি:
এখানে গাড়ি ছাড়া কোনও পর্যটক প্রবেশ করতে পারবেন না। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে দুটি জিপ ও দুটি মিনিবাস। পর্যটক বা দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করে গাড়ি বা জিপে করে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে রাখা বন্যপ্রাণি দেখতে পারবেন।

১২১৭ একর ‘কোর সাফারি’ পার্কের মধ্যে ২০ একরে বাঘ, ২১ একরে সিংহ, ৮.৫০ একরে কালো ভাল্লুক, ৮ একরে সিংহ, ৮ একরে আফ্রিকান চিতা, ৮১.৫০ একরে চিত্রা হরিণ, ৮০ একরে সাম্বার ও গয়াল, ১০৫ একরে হাতি, ৩০ একরে মায়া ও প্যারা হরিণ আছে।

আফ্রিকান সাফারি পার্কের জন্য বরাদ্দ ২৪০ একর। যার মধ্যে বাঘ, সিংহ, সাদা সিংহ, জেব্রা, জিরাফ, ওয়াইল্ড বিস্ট, অরিক্স, ভাল্লুক ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী। গাড়ির ভেতর থেকেও বাঘ, সিংহ কিংবা জিরাফকে ক্যামেরাবন্দি করতে পারবেন।

সাফারি কিংডম: ৫৫৬ একরের মধ্যে তৈরি করা এই অংশে ঢুকতে গেইটের পাশেই ম্যাকাও ল্যান্ড। এখানে আছে নীল-সোনালি ম্যাকাও, সবুজ ম্যাকাও, আফ্রিকান গ্রে প্যারট, টিয়া, পেলিকেন, লুটিনো রিংনেক প্যারটসহ প্রায় ৩৪ প্রজাতির পাখি। সবগুলোই আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে।

ম্যাকাও ল্যান্ডের পাশেই মেরিন অ্যাকুরিয়াম। রয়েছে প্রায় ২০ প্রজাতির মাছ। ক্রোকোডিল ফিস, টাইগার ফিস, লুকিয়ে থাকা ব্ল্যাক গোস, অস্কার। রয়েছে চিকলেট মাছ যা ২০ সেকেন্ড পরপর রঙ পরিবর্তন করে।

এছাড়াও রয়েছে প্রজাপতি সাফারি। যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। সাফারি কিংডমে রয়েছে প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র ফ্যান্সি কার্প গার্ডেন, জিরাফ ফিডিং স্পট, আইল্যান্ড, বোটিং ও লেইক জোন। তাছাড়া অর্কিড হাউজ, শকুন ও পেঁচা কর্নার, ক্যাঙারু, হাতি শো গ্যালারি ইত্যাদি।

সাফারি কিংডমের পশ্চিমে অংশে আলাদাভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল তিনটি পাখিশালা। ধনেশ পাখিশালায় রয়েছে প্রায় আট প্রজাতির পাখি। এরইমধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্যারট, ফিজেন্ট ধনেশ, ফ্লেমিংগো, ব্ল্যাক সোয়ান ও বিরল প্রজাতির মান্ডারিন ডাক ছাড়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু স্কয়ার:
পার্কের প্রবেশ পথে পার্কিং এলাকা, বিনোদন উদ্যান ও প্রশাসনিক কাজে ৩৮ একর এলাকা নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে বিশাল পার্কিং এলাকা। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় মুরাল ও মডেলসহ প্রধান ফটক, ফোয়ারা, জলাধার ও লেক।

তথ্যকেন্দ্র পার্ক অফিস, ডরমেন্টরি, বিশ্রামাগার, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, ঐরাবতী বিশ্রামাগার, ময়ূরী বিশ্রামাগার, ইকো-রিসোর্ট, ডিসেপ্লে ম্যাপ, আরসিসি বেঞ্চ ও ছাতা।

এছাড়াও রয়েছে দুটি বিশাল আকার পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ, একটির নাম টাইগার রেস্তোরাঁ অপরটি সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ। এই দুটো রেস্টুরেন্টে বসেই কাচের মধ্যে দিয়ে সিংহ এবং বাঘ দেখতে দেখতে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে।

আয়তন ও অবস্থান:
ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় মাওনা ইউনিয়নে সাফারি পার্কটি অবস্থিত। ভাওয়াল গড়ের ছোট ছোট টিলা ও নিচু ভূমি সমৃদ্ধ বিশাল শালবনে তৈরি করা হয়েছে এই সাফারি পার্ক। ৩৬৯০ একর বিশাল আয়তনের এই পার্ক উপর থেকে দেখার জন্য রয়েছে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। ২০১০ সালে পার্কের কাজ শুরু হয়। আর ২০১৩ সালে পূর্ণাঙ্গ সাফারি পার্ক হিসেবে চালু করা হয়।
পার্কে প্রবেশ ফি:
প্রাপ্তবয়ষ্ক জনপ্রতি পার্কে প্রবেশ টিকেট ৫০ টাকা এবং ১৮ বয়সীদের নিচে প্রবেশ ফি ২০ টাকা। শিক্ষা সফরে আসা বা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। গাড়িতে করে কোর সাফারি পার্ক পরিদর্শন প্রাপ্তবয়ষ্কদের প্রতিজনের টিকিট ফি ১শ' টাকা। অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ৫০ টাকা।

যাতায়াত:
গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে বাঘের বাজার গেলেই চোখের পড়বে সাফারি পার্কের বিশাল সাইনবোর্ড। বাঘের বাজার থেকে সাফারি পার্কের দরজা পর্যন্ত যেতে রিকশা ও অটোরিকশা পাওয়া যায়। ভাড়া নেবে ৫০ থেকে ৮০ টাকা।

গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে বাঘের বাজার পর্যন্ত যাওয়ার জন্য রয়েছে হিউম্যান হলার লেগুনা। ছুটির দিন ও সাধারণ দিন হিসেবে ভাড়া মান নির্ভর করে। ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াত করা বাসে করেও বাঘের বাজার সরাসরি নামা যায়।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন