সংযোগই নেই,অথচ বিদ্যুৎ বিল ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা!

  14-07-2018 07:41PM

পিএনএস, লালমনিরহাট : বিদ্যুৎ সংযোগ তো দূরের কথা, নেই কোন খুঁটি কিংবা লাইন। অথচ ৪২ পরিবারের নামে বিদ্যুতের বিল এসেছে দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকা। এ ঘটনায় তাজ্জব বনে গেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। দ্রুত ভুয়া বিল বাতিল ও দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছে তারা।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী ছোট্ট একটি গ্রামের নাম মহিষাশহর। গ্রামটির অধিকাংশই হতদরিদ্র আর অশিক্ষিত জনগোষ্ঠি। উন্নয়নের ছোঁয়া নেই বললেই চলে। গ্রামের ৪২টি পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা বিদ্যুৎ অফিসে ২০১৫ সালে আবেদন করে। আবেদনের পরপরই একটি দালাল চক্র তাদের দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে হাতিয়ে নেয় ১০ লক্ষাধিক টাকা। এরপর ৩ বছর ২ মাস পেরিয়ে গেলেও ওই এলাকায় বসেনি কোন বিদ্যুতের খুঁটি কিংবা মিটার, এমনকি নকশাও তৈরি হয়নি। এরই মধ্যে গত মাসে ওই ৪২ পরিবারের নামে জনপ্রতি ৫ হাজার ৯৩ টাকা হারে দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকার বিদ্যুৎ বিল পাঠায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো।

শনিবার ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদনের পর স্থানীয় একটি চক্র মিটারপ্রতি ১২-১৮ হাজার টাকা বুঝে নেন ও তিন মাসের মধ্যে সংযোগ দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছর ২ মাস পেরিয়ে গেলেও মেলেনি বিদ্যুতের খুঁটি, লাইন কিংবা মিটার কোনটি। এরই মধ্যে সরকার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে সরকারি খাতে নেয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয় । নিয়মানুযয়ী পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় তাদের নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এতেই বিপাকে পড়ে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা ও দালাল চক্রটি।

এ দিকে গ্রাহকদের চাপের মুখে গত বছর ওই গ্রামের ৪২টি পরিবারের জন্য ৪২ টি মিটার পাঠানো হয়। খুঁটি কিংবা লাইন না পেয়ে গ্রাহকরা মিটারগুলো বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরই মধ্যে জুন মাসে ওই পরিবারগুলোর নামে বিদ্যুৎ বিল পাঠায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো।

পরে পরিবারগুলো বিলের কাগজ নিয়ে কালীগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিস গিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। এরপর দোষিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন তারা।

ওই গ্রামের মফিজুর রহমান বাদশা, মন্তাজ উদ্দিন, ইব্রাহিম খলির জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের আশায় কেউ কেউ স্থানীয় মহাজনের কাছে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে দালাল চক্রকে টাকা দেন। কিন্তু কেউই সংযোগ পাননি। উপরন্তু ৫ হাজার ৯৩ টাকার বিদ্যুৎ বিল এসেছে তাদের প্রতিটি পরিবারের নামে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কালীগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী শাহানুর ইসলাম জানান, এরই মধ্যে এসব গ্রাহকের নামের বিল মওকুফ করতে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ তাদের নির্দেশ দিয়েছে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন