টুং-টাং শব্দে মুখর বরিশালের কামারপল্লী

  16-08-2018 06:32PM

পিএনএস, (মো:আরিফ হোসেন) : টুং-টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে বরিশালের কামারপল্লী। দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। কোরবানীর ঈদ যতো এগিয়ে আসছে, ততই তাদের ব্যস্ততা বাড়ছে। নতুন নতুন দা, বটি, চাপাতি, ছুরি তৈরির পাশাপাশি চলছে পুরনোগুলোর সারাইয়ের কাজ।

অন্যদিকে নতুন বটি-ছুরি বিক্রেতারা বলছেন, কোরবানীর সরঞ্জাম পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ করা হয়েছে। পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়েছে। কোরবানীর ঈদের বাকি আর ক'দিন। ইতিমধ্যেই কামাররা রাত-দিন ব্যস্ত দা, বটি, চাপাতি, ছুরি তৈরিতে। কামার শিল্পীদের মতে, বছরের অন্য সময় কাজের চাপ কম থাকে। তবে কোরবানীর ঈদের এক মাস আগে থেকেই তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ জন্য চাহিদা মাফিক সরবরাহ করতে দিন-রাত ব্যস্ততা তাদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরের কামারপট্টির কামারদের এখন দম ফেলার সময় নেই। একের পর এক ক্রেতা এসে দোকানে ভিড় করছেন। ফলে দোকান ছেড়ে যাওয়ারও কোন উপায় নেই। তাই সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার তারা (কামার) দোকানে বসেই খেয়ে নিচ্ছেন। পুরনো দুটি দা, একটি বটি ও একটি ছুরিতে শাণ দেয়ার জন্য কামররা তিনশ’ পঞ্চাশ টাকা রেখেছেন। অন্য সময়ে এর মজুরি ছিল দেড় শ’ টাকা। আর নতুন একটি ছোরা ৩৫০ থেকে চার শ’ টাকা, বিভিন্ন সাইজের চাক্কু ৫০ থেকে এক শ’ টাকা, বটি দুই থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।

ক্রেতারা জানান, অন্যসময়ের চেয়ে এখন দ্বিগুন দাম রাখা হচ্ছে। কোরবানীদাতা পরিবারের সদস্যরা কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কসাই ও মৌসুমী কসাইরা নিজেদের চাহিদামতো দা, ছুরি, চাক্কু, চাপাতি, কুড়াল, বটি বানাতে সবাই ছুটছেন কামারদের কাছে। বরিশাল নগরের হাটখোলা, নতুন বাজার, বাংলাজার, নথুল্লাবাদ সেন্ট্রাল পয়েন্ট মার্কেট, পলাশপুর বৌ-বাজার বেলতলা, তালতলী বাজার, সদর উপজেলার চরকাউয়া, সাহেবেরহাট, লাহারহাটসহ ছোট-বড় সকল হাটের কামাররা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

কামাররা জানায়, এ পেশায় অধিক পরিশ্রম। শ্রম অনুযায়ী তারা এর যথাযথ মূল্য পাননা। কারণ লোহার বাজারে দাম বেশি। জীবিকা নির্বাহে কষ্ট হলেও শুধু পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশাটিকে এখনও আঁকড়ে আছেন অধিকাংশ কামররা। কোরবানীর পশুর জন্য ধারালো দা, বটি, চাক্কু, চাপাতিসহ অন্যান্য সামগ্রীর বেশি প্রয়োজন হওয়ায় সকলেই এখন ছুটছেন কামারদের কাছে। ফলে কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে কামারপাড়া। পলাশপুর বৌ-বাজারের কামার বিপুল কর্মকার বলেন, এবারের ঈদের চাহিদায় দিনরাতে ২০ থেকে ৩০টি কাজে গড়ে প্রতিদিন তিনি খরচ বাদে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করছেন। তিনি আরও জানান, একটি বড় দা পাঁচ কেজির লোহা দিয়ে তৈরি করে মজুরিসহ সাতশ’ টাকা, কুড়াল এক কেজির দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা, চাপাতি প্রকার ভেদে চার থেকে পাঁচশ’ টাকা, বড় ছোরা ওজন মতে তিন থেকে সাড়ে ছয়শ’ টাকা, কুড়াল তিন থেকে চারশ’ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

কামারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানীর ঈদের সময় তাদের যে বেচাকেনা হয় তা আর অন্যকোন সময় হয়না। তাই এ ঈদের আগে পেশাজীবী কামারদের সচ্ছল হওয়ার মোক্ষম সময়। এ কারণে অনেক কামার পূর্ব থেকেই ধারালো এসব মালামাল মজুদ করে ঈদের সময় বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকেন। হাটখোলার সুভাষ কর্মকার বলেন, সারাবছরই আমাদের তৈরি জিনিসের চাহিদা থাকে। তবে কোরবানীর ঈদে পশু কোরবানীর জন্য নতুন ছুরি, চাপাতি, চাক্কুর কদর অনেক বেড়ে যায়। ফলে আমরা লোহার এসব জিনিসের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আগে থেকে বেশকিছু জিনিস বানিয়ে রাখি।

তালতলী বাজারের কামারি অজয় কর্মকার বলেন, আগে অন্য হাট-বাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন লৌহজাত জিনিস বানিয়ে গড়ে পাঁচ থেকে সাত’শ টাকা রোজগার হতো। কোরবানীর ঈদের আগে লোহার অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন ১৫ থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়। তিনি আরও বলেন, কোরবানীর ঈদের অতিরিক্ত অনেক মালামালের অর্ডার নেয়ায় গত পাঁচদিন থেকে নতুন কাজের অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছি। তাদের এ ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগেরদিন পর্যন্ত।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন