পাইকগাছায় ১০ বছরে ১০ হাজার পরিবার স্বাবলম্বী

  15-11-2018 08:57PM

পিএনএস, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার পাইকগাছায় আর্থ-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পুষ্টি চাহিদা পূরণ সহ দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প। প্রকল্পের সহায়তায় গত ১০ বছরে উপজেলায় স্বাবলম্বী হয়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। প্রকল্পের বেশিরভাগ সদস্য উৎপাদনমূখী কর্মকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন।

সূত্রমতে, উপজেলায় ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতায় ১০ ইউনিয়নে ১৮২টি সমিতি রয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা ৯ হাজার ২৩৭ জন। গত ১০ বছরে প্রকল্পের আওতায় ৪ শতাধিক সদস্যদের মাঝে সম্পদ হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে গাভী, হাস-মুরগী, গাছের চারা, বীজ ও ঢেউটিন। গবাদি পশু ও হাস-মুরগী পালন, মৎস্য চাষ, নার্সারী, উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর সহস্্রাধিক সদস্যকে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতাধীন সদস্যদের মোট তহবিল ১৩ কোটি ৬৩ লাখ ২ হাজার টাকা। যার মধ্যে জমাকৃত সঞ্চয় ৫ কোটি ৩৬ লাখ ৫৪ হাজার। সরকার কর্তৃক কল্যাণ অনুদান প্রাপ্তি ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার। ঘূর্ণায়মান তহবিল ৪ কোটি ৮২ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৬৩ কোটি ৭৮ লাখ ৭ হাজার টাকা। প্রকল্পের এ ধরণের সার্বিক সহায়তায় উৎপাদন মূখী ও ব্যবসায়ীক কার্যক্রম করে স্বাবলম্বী হয়েছে হাজারও পরিবার।

উপকারভোগী মালথ গ্রামের শেখ আব্দুল গফফার পিএনএসকে জানান, ২০১১ সালে ১০ হাজার টাকা লোন নিয়ে বাড়ীতে স্লাব তৈরীর কাজ শুরু করি। এর মাধ্যমে বর্তমানে আমি একটি ফ্যাক্টরী করেছি। যেখানে অনেক শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। গদাইপুর গ্রামের মীর মারুফ হোসেনের স্ত্রী রওশানারা বেগম জানান, আমার স্বামী একজন প্রতিবন্ধি। প্রকল্প থেকে ২০১১ সালে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে মুরগী পালন শুরু করি। শুরুতেই খামারে ১শ’টি মুরগী ছিলো। এর মাধ্যমে ভালভাবে আমার সংসার চলে। বর্তমানে আমার খামারে সহ¯্রাধিক মুরগী রয়েছে।

একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী জয়া রানী রায় পিএনএসকে জানান, প্রকল্পের সকল কার্যক্রম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। কমপক্ষে ৪০ ও সর্বোচ্চ ৬০ জন সদস্য নিয়ে প্রকল্পের সমিতি গঠন করা হয়। সমিতির শুরু হওয়ার পর ২ বছর পর্যন্ত সরকারি ভাবে সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। সরকারিভাবে প্রদান করা অর্থ ও এর সার্ভিস চার্জের সম্পূর্ণ টাকা সমিতির তহবিলে জমা হয়। ফলে ২ বছরের মধ্যে একটি সমিতির তহবিল ৯ লাখ হয়। এটা একটি ক্ষুদ্র সংগঠনের সদস্যদের স্বাবলম্বী করার জন্য অনেক বড় তহবিল। অন্যকোনো সংগঠনের এতবড় তহবিল হয় না। তিনি বলেন, প্রকল্পে দুই ধরণের ঋণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যার মধ্যে প্রকল্প থেকে দেওয়া ঋণের সার্ভিস চার্জ ৮%, আর পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে ১৫ জন সদস্যকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সাড়ে ৭ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যার সার্ভিস চার্জ ৫%। এদিকে প্রকল্পের অর্জন ও অগ্রগতি সন্তোষ জনক হলেও জনবল সংকটের কারণে কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ঠরা মনে করছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না পিএনএসকে জানান, একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার একটি প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকার হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হচ্ছে। এক টুকরো জায়গাও যাতে পতিত না থাকে এ জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। প্রায় ১০ হাজার পরিবার প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন