এক দিনের বাজার!

  18-01-2019 05:38PM

পিএনএস, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : দেশে বৃহত্তম যে ১৩টি পাইকারি বাণিজ্যিক কেন্দ্র আছে এর একটি খুলনার কপিলমুনি (বিনোদগঞ্জ) বাজার। আজ হতে প্রায় শত বছর আগে এ আধুনিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু।

জানাযায়, দেশের দক্ষিণ সুন্দরবন লোকঘেষা জনপদ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি জন্মনেন বিনোদ বিহারী সাধু। শত বছর আগে জঙ্গল পরিষ্কার করে মানুষ এখানে বসতি স্থাপন করেন। শুরু হয় দেশ-বিদেশে সড়ক ও নৌপথে ব্যবসা বাণিজ্য। এমন সময় দেবদূত হয়ে জন্মনেন বিনোদ বাবু। মহান এই মানবের জন্ম ১৮৯০ সালের ২০মে। পিতা যাদব চন্দ্র সাধু, মাতা সহচরি দেবী, পিতামহ ভরত চন্দ্র সাধু, পিতামহী অমৃতময়ী দেবী। তিনি পিতা মাতার তৃতীয় সন্তান ছিলেন। কপিলমুনি থেকে সাত কিলোমিটার দূরে পায়ে হেঁটে নদী পেরিয়ে বিশ্ব বরেণ্য বৈজ্ঞানিক স্যার পিসি রায় প্রতিষ্ঠিত রাড়ুলীর আর কে বি কে হরিশচন্দ্র ইনষ্টিটিউটে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।
পারিবারিক জীবনে ৪ পুত্র ও ৩ কন্যার জনক তিনি। কপিলমুনি বাজারেই তার ব্যবসা জীবনের (১৯৩০সাল থেকে ১৯৪১সাল) ১১বছর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এলাকার মানুষের ভাগ্যন্নোয়নের বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি পূর্বপুরুষদের নামে প্রতিষ্ঠা করেন কপিলমুনি উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জনহিতকর প্রতিষ্ঠান। মাতার নামানুসারে ১৯২৬ সালে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির স্কুল। অমৃতময়ী টেকনিক্যাল স্কুল, লেদ, তাঁত, সুগার মেশিন স্থাপন ও বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করেন। ২০ শয্যা ভরত চন্দ্র হাসপাতাল। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুরোধে ১৯৩৬ সালের ৮জানুয়ারি খুলনা সদর হাসপাতালে নিজ খরচে ভবন নির্মাণ করে ঐ ভবনেই এক্স-রে মেশিনটি স্থাপন করেন।

মানুষের যাতায়াতের জন্য নাছিরপুর খালের উপর একটি কাঠের পুল (বর্তমানে ব্রিজ) নিজ অর্থে রাস্তা পাকা করে দেন। কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু নির্মাণের জন্য কলকাতার সেন্ট্রাল ব্যাংকে লক্ষাধিক টাকা রেখে যান। বাজারের মধ্যভাগে প্রায় ২ একর জমিতে পুকুর খনন করেন। যার নাম দেওয়া হয় সহচরী সরোবর। নিজ প্রতিষ্ঠিত দাতব্য চিকিৎসালয় ও ভরতচন্দ্র হাসপাতালের জন্য খুলনা জেলা পরিষদে তৎকালীন ৩২ হাজার টাকা রেখে যান। কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির এর অর্থ যোগানের জন্য কলকাতা রিজার্ভ ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় রাখেন। বাংলা ১৩৩৯ সালে স্থাপন করেন “বিনোদগঞ্জ”। বাংলা ১৩৩৮ সালের ২ কার্ত্তিক প্রতিষ্ঠা করেন সার্বজনীন বেদ মন্দির। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তিনি সমাজ সেবায় আতœ নিয়োগের উজ্জল দৃষ্ঠান্ত রাখায় তৎকালীণ ব্রিটিশ সরকার তাঁকে রায় সাহেব উপাধীতে ভূষিত করেন। বেরী বেরী রোগে কলকাতায় চিকিৎসাধিন অবস্থায় বাংলা ১৩৪১ সনের ৩রা মাঘ মৃত্যু বরণ করেন তিনি। তার মৃত্যু পরবর্তী সময় বাজারের সকল ব্যবসায়ীরা গভীর ভাবে স্মরণ করে আসছেন। মৃত্যু বার্ষিকীতে সকল ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রাখেন। নিত্যপন্য দোকানীরা শুক্রবার বাজারের বাহিরে কপিলেশর্^রী ¯œান ঘাট এলাকায় দোকান নিয়ে বসেন।

গুণীজন স্মৃতি সংসদের সভাপতি আ. সবুর আল-আমীন বলেন-রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর কাছে এলাকার মানুষ চিরঋণী। বাজারের সকল ব্যবসায়ী তাকে ঈশ্বরজ্ঞানে দেখে আসছেন। এই মহান মানুষটিকে বিশেষভাবে স্মরণ করতে ব্যবসায়ীরা সকল দোকান বন্ধ রাখেন। আর এ এক দিনের বাজারে ক্রেতা সাধারণের উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো।

এদিকে রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর ৮৪তম মৃত্যু তিরোধান দিবস উপলক্ষে শুক্রবার কপিলমুনি বিনোদ স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ ও বিনোদ স্মৃতি সংসদ প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, র্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করেন। বিনোদ স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ এর আয়োজনে ইউপি চেয়ারম্যান মো. কওছার আলী জোয়াদ্দার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রশিদুজ্জামান, নির্মল মজুমদার, রেজাউল করিম খোকন, আনন্দ মোহন বিশ্বাস, ইকবাল হোসন খোন, শিমুল বিল্লা বাপ্পী, গৌতাম সাহা, মধু সূদন হালদার প্রমুখ। অনুরূপভাবে বিনোদ স্মৃতি সংসদ মাল্যদান, র্যালী শেষে পথ সভায় বক্তব্য রাখেন অ্যাড. দিপঙ্কর সাহা, প্রভাষক তাপস সাধু প্রমুখ।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল




@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন