বিয়ের প্রলোভন দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ, অশ্লীল ভিডিও ধারণ

  23-04-2019 05:53PM

পিএনএস ডেস্ক : ঈশ্বরদীতে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে এক তরুণীকে (২৫) তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে সাগর হোসেন (২৭) নামের এক যুবক।

সোমবার সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। শুধু ধর্ষণই নয় অসহায় ওই যুবতীর অশ্লীল ভিডিও করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে সাগর তার স্বজনেরা।

সাগর ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের মো. শহিদুল্লাহ্ মণ্ডলের ছেলে।

ধর্ষণের শিকার তরুণী জানান, প্রায় দুই বছর পূর্বে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের শহিদুল্লাহ্ মণ্ডলের ছেলে মো. সাগর হোসেন এর সাথে। পরিচয় হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর সাগর ওই তরুণীকে সাথে নিয়ে গত বছরের জুলাই মাসে তার বাড়িতে নিয়ে পরিবারের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি মেনে নিয়ে তরুণীকে তাদের বাড়িতে রেখে দেয়।

তরুণী আরো জানান, ওইদিন রাতে সাগর আমার ঘরে এসে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এভাবে তার বাড়িতে দুইদিন রেখে আমাকে বার বার ধর্ষণ করে। সে সময় আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে সিএনজি যোগে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে বেশ কিছু দিন যাওয়ার পরে সাগরকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সাগরসহ তার দুলাভাই আশরাফুল ইসলাম (আরশাফ) ও চাচাতো ভাই বিকাশ স্থানীয় এক হুজুরের কাছে নিয়ে গিয়ে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে পড়িয়ে দেয়।

এরপর থেকে সাগর তার বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে আমার সাথে স্বামী-স্ত্রীর মতো চলাফেরাসহ সবকিছু করতে থাকে। বিষয়টি আমার পরিবার, সাগরের পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে জানাজানি হলে আমি সাগরকে বিয়ে রেজিস্ট্রির জন্য চাপ দিই। এতে সাগর অসম্মতি জানিয়ে আমাকে শারীরিক ও মানুষিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর গত ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবসের দিন সন্ধ্যায় সাগর আমাকে বিয়ের কথা বলে তার বাড়িতে নিয়ে এসে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হলে স্থানীয় এলাকাবাসী এসে আমাদের এক ঘরের মধ্যে আটক করে বিয়ের বৈধ কাগজ-পত্র আছে কিনা জানতে চায়। সে সময় কোন কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে তাদের খবরে ঈশ্বরদী থানার একদল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের দু’জনকে আটক করে।

সে সময় সাগরের পরিবারের লোকজন পরদিন সকালে আমাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করিয়ে দেবে মর্মে অঙ্গীকার করলে পুলিশ আমাদের ছেড়ে দেয়। রাতেই সাগরের পরিবারের লোকজন আমাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে একটি বাগানে নিয়ে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে। আমি যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি তাহলে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়ে একটি সাদা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়।

পরবর্তীতে আমি কান্নায় ভেঙে পড়লে সাগরের দুলাভাই আশরাফুল ইসলামও আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে আমাকে জোরপূর্বক একটি সিএনজিতে উঠিয়ে পাবনায় পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে গত ৬ এপ্রিল আবারও আমি স্ত্রীর দাবি নিয়ে সাগরের বাড়িতে এলে আমাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।

এসব ঘটনার বিবরণ দিয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাগরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে সাগরের বাবা শহিদুল্লাহ্ মণ্ডল এক সপ্তাহের মধ্যে আমার সাথে সাগরের বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলে পুলিশ সাগরকে ছেড়ে দেয়।

তরুণী জানান, গত রবিবার সাগরের পরিবার ও আমার পরিবার এক সাথে বসে বিয়ের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তারা সেটা না করে উল্টো আমাকেসহ আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত সাগর হোসেন সম্পর্কের কথা স্বীকার করে জানান, ও আমার সাথে প্রতারণা করেছে। তাই আমার পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমি তাকে বিয়ে করতে পারবো না।

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী জানান, মেয়েটি পরবর্তীতে থানায় কোন অভিযোগ না করায় বর্তমান অবস্থা আমাদের জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন