দামুড়হুদা সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে ঢুকছে ভারতীয় গরু-মহিষ

  14-06-2019 12:53PM


পিএনএস ডেস্ক: দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে দেদারছে আসছে ভারতীয় গরু ও মহিষ। চোরাকারবারিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে কৌশলে এসব গরু বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) প্রতিনিয়ত পরিত্যক্ত অবস্থায় চোরাইপথে আসা গরু-মহিষ জব্দ করলেও চোরাকারবারিদের আটক করতে পারছে না। এদিকে, চোরাকারবারির সাথে জড়িত সন্দেহে গত তিন দিনে সীমন্তবর্তি দুই গ্রামের ২০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে বিজিবি।

যাদের নামে মামলা হয়েছে তারা হলেন- চাকুলিয়া গ্রামের আরাফাত হোসেনের ছেলে সহিদ মিয়া (২৪), সাদেক হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৬), ছালে আহমদের ছেলে বাবুল মিয়া (২৮), কুদ্দুস আলীর ছেলে কামাল হোসেন (২৭), আবু তাহেরের ছেলে গনি মিয়া (২৮), দৌলত খানের ছেলে মকবুল মিয়া (২৫), হাসেম আলীর ছেলে সম্রাট (২৮), মিজানুর রহমানের ছেলে আমানউল্লাহ (২৪), সামউদ্দিনের ছেলে আব্দুল মমিন (২৫), আব্দুল আলিমের ছেলে আলমগীর (২৩), তাহের আলীর ছেলে আব্দুল গনি (২৮), আব্দুল হাকিমের ছেলে আলাল উদ্দিন (৩৫), হোসেন আলীর ছেলে সম্রাট শেখ (২৫), ঠাকুরপর গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে বকুল মিয়া (২২), কবীর হোসেনের ছেলে আলমগীর (২৮), আলমগীর হোসেনের ছেলে কামরুল (২৬), আসাদুলের ছেলে ওয়াহিদ (২৪), আজাদ আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন (২৬), ফজলু মিয়ার ছেলে আরিফ (২৫) এবং কবীর মিয়ার ছেলে আশেদ আলী(২৪)।

এভাবে চোরাইপথে গরু-মহিষ আসতে থাকলে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন স্থানীয় খামারিরা। কোরবানির আগ পর্যন্ত ভারতীয় গরু আসতে থাকলে দেশীয় গরুর বাজার ভালো না পেলে খামারিরা এই চাষে আগ্রহ হারাবেন।

দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় খামারগুলোতে যে পরিমাণ গরু-ছাগল মজুদ আছে তা আগামী কোরবানীর চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, দামুড়হুদা এলাকায় দীর্ঘ সীমান্ত থাকলেও মুন্সিপুর, ঠাকুরপুর, চাকুলীয়া, বাড়াদী সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে এসব গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। চোরাকারবারিরা অধিক লাভের আশায় রাতের আঁধারে অতি কৌশলে এসব পশু দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে এসে লোকালয়ের বাইরে লুকিয়ে রাখে।

ভারতীয় গবাদিপশু দেশে প্রবেশ করায় খামারিরা তাদের পালিত পশুর বাজারদর নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারপরও এলাকায় দিন দিন খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দামুড়হুদার জুড়ানপুর গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে আছির উদ্দীন জানান, ২০১৮ সালের প্রথম দিকে তিনি আট লাখ টাকা ব্যায়ে টিনের সেড দিয়ে সাঁঝের মায়া এগ্রো নামে খামার গড়ে তোলেন। পরে আট বিঘা জমিতে গরুর খাবারের জন্য ঘাস লাগান। এর দুই মাস পর পনের লাখ টাকায় ২০টি এঁড়ে বাছুর ও চারটি গাভি ক্রয় করেন। পরে ছয় মাস পালনের পর এঁড়ে গরু বিক্রি করে দেন। এসময় ভারতীয় গরুর চাপে বাজার ভালো না পাওয়ায় চার লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়। বর্তমানে তার খামারে গাভিসহ ২৬ টি গরু রয়েছে। চোরাই পথে ভারত থেকে গরু মহিষ আসায় বাজার দর নিয়ে আশঙ্কা করছেন তিনি। ভারতীয় গরু আসা যদি বন্ধ হয় তাহলে ভালো বাজার দর পেলে লাভবান হবে বলে আশা করছেন।

দামুড়হুদা উপজেলা সদরের খামারী মাহামুদুর রহমান মাসুদ জানান, গত বছর কয়েকটি দেশি জাতের গরু নিয়ে নিজের বাড়িতে গবাদিপশুর একটি ছোট খামার গড়ে তুলেছিলেন। কোরবানির ঈদে বিক্রি করে ভালো লাভবান হবেন এমন আশায় কিন্তু ভারতীয় গরুর চাপে লাভের পরিমান কম হওয়ায় তিনি বলদ গরুর আবাদ বন্ধ করে এ বছর গাভির খামার গড়ে তুলেছেন। এতে তিনি ভালো লাভবান হচ্ছেন বলে জানান। তবে বিজিবি যদি আন্তিকতার সাথে চেষ্টা করে তবে যেমন চোরাইপথে গরু আসা বন্ধ হবে, তেমনি স্থানীয় খামারিরা লাভবান হবেন।

দামুড়হুদার ঠাকুরপুর বিওপি নায়েক সুবেদার আ. হালিম জানান, চোরাকারবারিদের চোরাই গরু-মহিষ আটক করা হচ্ছে। এরা পালিয়ে গেলেও এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়াও এদের আটকের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে এই চোরাচালান বন্ধ করা হবে।

দামুড়হুদা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মশিউর রহমান জানান, উপজেলা ছোট বড় প্রায় এক হাজার চার শ খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রায় ৭ হাজার গরু মজুদ আছে। এর মধ্যে ৬ হাজার কোরবানিযোগ্য। আসন্ন ঈদে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪ হাজার। চোরাইপথে গরু-মহিষ আসতে থাকলে স্থানীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন