বাঁশখালীতে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া; আতঙ্কিত এলাকাবাসী

  21-06-2019 05:21PM

পিএনএস ডেস্ক : চট্টগ্রাম বিভাগের বাঁশখালীর কোনো গ্রামে হেঁটে যাচ্ছেন। তখন আপনার কানে আসতে পারে কিছু গুলির শব্দ। প্রথম দিকে মনে হতে পারে, সামাজিক কোনো উৎসবের আতশবাজি ফুটছে। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, সন্ত্রাসীদের দুই গ্রুপ আধিপত্য বিস্তার করতেই বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। আর এই ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশও ছুটে এসে পরিস্থিতি শান্ত করতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়েন। ফলে একটি ত্রিমুখী বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এর ফলে সাধারণ মানুষের থাকে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে।

বাঁশখালী থানার তথ্য মতে, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১৫ মাসে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়েছেন ২২ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য। সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৯ জন, গুলিতে সাধারণ মানুষ আহত ও পঙ্গু হয়েছেন ৮৭ জন, র‌্যাবের ক্রস ফায়ারে নিহত হয়েছেন ৪ জন, র‌্যাব-পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে ৩২টি ও কার্তুজ উদ্ধার করেছে ২২৩ রাউন্ড।

বাঁশখালীর বৈলছড়ি, সরল, চাম্বল, ছনুয়া, গন্ডামারা, বাহারছড়া, খানখানাবাদ, কাথারিয়া ও পুকুরিয়াসহ ৯টি ইউনিয়নে ব্যাপকহারে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রীতিমতো অঘোষিত যুদ্ধক্ষেত্রে রুপ নিয়েছে। বাকি ৫ ইউনিয়ন পুঁইছড়ি, শীলকূপ, সাধনপুর, শেখেরখীল, কালীপুর ও ১টি পৌরসভায় অস্ত্রের মহড়াও কমতি নেই। সরকারিভাবে পরিত্যক্ত ও মালিকানাধীন কয়েক হাজার একর জমির চিংড়ি ঘের দখল, লবণের মাঠ দখল, বনবিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকার পাহাড়ি গাছ কর্তন, পাহাড় কাটা, বালু উত্তোলন, স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বনবিভাগের জায়গা বিক্রয় করে বাড়ি নির্মাণসহ বিবিধ বিষয় নিয়ে কতিপয় জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করতে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ ওঠেছে, এসব বিষয় থেকে লাখ লাখ টাকা কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও কতিপয় সরকারি কর্মকর্তাদের পকেটেও যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অপরাধ দমনে ঠিকমতো কাজ করে না। এমনকি চাম্বলের জঙ্গল পাহাড়ি এলাকায় ১৫ একরেরও অধিক সরকারি বনানয়নের জায়গার গাছ কেটে বিলীন করা হলেও বনবিভাগের কোনো অভিযোগ সংশ্লিষ্ট থানায় বা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থাপন করেননি বিট কর্মকর্তা।

বাঁশখালী জুড়ে অস্ত্রের মহড়া ও বন্দুকযুদ্ধের ভয়ানক পরিস্থিতি বাঁশখালীবাসীর মুখে মুখে এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে, ছনুয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৮টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত জলদস্যু মো. ইউনুচ, সরল ইউনিয়েনের ৫টি মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক দুর্ধর্ষ ডাকাত শের আলী, ৭টি মামলার পলাতক ডাকাত কবির আহমদ, চাম্বল ইউনিয়নের ৬টি মামলার পলাতক ডাকাত জাকের হোসেনের নাম। তাদের প্রকাশ্যে অস্ত্র মহড়া এতই ভয়াবহ যে, তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও ভয় করে না।

তাদের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন, কাথারিয়ায় ফেরিওয়ালা আহমদ কবির (৫০), ওই সময় ৫ জন পুলিশও আহত হন। এছাড়াও দক্ষিণ সরল গ্রামে মামলা বাদি আবুল কালাম (৪২), পুকুরিয়ায় লিচু ব্যবসায়ী মো. আমিন (৫০), খানখানাবাদের ডোংরা গ্রামে সিএনজি অটোরিক্সা চালক ফোরখ আহমদ প্রকাশ লেদুসহ (৪০) মোট ৯ জন নিহত হয়েছেন।

র‌্যাবের ক্রস ফায়ারে নিহত হয়েছেন, মো. তালেব (৩৮) নামের একজন। ওই সময় তার লাশের পাশ থেকে ৭টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়। নিহত হয়েছেন দেলোয়ার হোসাইন প্রকাশ হোসাইন্য (৪০)। তার লাশের পাশ থেকে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৪৫ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। গত ৫ মে নিহত হন ছনুয়ার খুদুকখালী গ্রামের সোলতান বাহাদুর (৪৭)। তার লাশের পাশ থেকে উদ্ধার হয় ২টি আগ্নেয়াস্ত্র অস্ত্র ও ২৩ রাউন্ড কার্তুজ। শেখেরখীল ইউনিয়নে মো. আলী নামের শিশু ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে এক ধর্ষককে ক্রস ফায়ার করে হত্যা করা হয়। এছাড়া পুলিশ সরল, চাম্বল, গন্ডামারা, পুঁইছড়ি, বাহারছড়া, খানখানাবাদসহ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে আরও ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার করেছে।

গতকাল বুধবার (১৯ জুন) বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের উদ্দ্যেগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারের সভাপতিত্বে ডাকবাংলো মিলনায়তনে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সহকারী কমিশনার (ভূমি), বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ১৪ জন চেয়ারম্যান, ১টি পৌরসভার মেয়র ও সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যের অস্ত্রের মহড়া ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। অস্ত্রবাজরা এবং বন্দুকযুদ্ধের সুবিধাভোগীরা কেউ রক্ষা পাবে না। প্রত্যেক জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করতে।

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, আমি কয়েকদিন হলো যোগদান করেছি। বন্দুকযুদ্ধ ও অস্ত্রের মহড়ার বিষয়টি নিয়ে আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করেছি। আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভাও করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছি। কারা এসব অপরাধ করছে তাদেরও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই এর ফলাফল বাঁশখালীবাসী পাবেন। সশস্ত্র অস্ত্রধারী কেউ রক্ষা পাবে না।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন