সরকারি বনায়নের জায়গা দখল করে চিংড়ি ঘের

  21-10-2019 04:12PM

পিএনএস, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার পাইকগাছায় সামাজিক বনায়নের চর ভরাটি জমি দখল করে চিংড়ি ঘের করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন দখলকারীরা পরিকল্পিত ভাবে নাফনা ও কোদাল দিয়ে গোল পাতা গাছের ঝাড় নষ্ট করে দিচ্ছে। কেটে ফেলছে বনায়নের গাছ। পরিবেশ বিদরা বলছেন বনায়নের ভিতর বাঁধ দেয়ার ফলে লবণ পানি আটকে থাকায় কেওড়া, বাইন, ওড়া সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মরে যাচ্ছে। সুফল ভোগীদের অভিযোগ উপজেলা বন কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছেনা।

সরজমিনে গিয়ে জানাগেছে বিগত ২০১৪-১৫ সালে উপজেলার লতা ইউপির হাড়িয়া মৌজার ১৮/১৯ নং পোল্ডারে হাড়িয়া পুরাতন খেয়াঘাট হতে দক্ষিণে হাড়িয়া পাকা ঘাট পর্যন্ত শিবসা নদীর চর ভারটি প্রায় ১০০ বিঘা সরকারী জমিতে সবুজ বনায়ন গড়ে ওঠে। এখানে গোলপাতা, কেওড়া, বাইন, কাকড়া, সুন্দরী, ওড়া সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়। সৃজিত বনভূমি সংরক্ষণ ও গবাদীপশু নিয়ন্ত্রনের জন্য সাবেক নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কবিরউদ্দিন সরজমিনে যেয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেন। আজও তা সংরক্ষিত আছে এবং বর্তমান এ বনভূমি মিনি সুন্দরবনের আকার ধারণ করেছে। এখই সাথে এ বনভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে।

এদিকে হাড়িয়া চর বনায়ন সমিতির সভাপতি গৌতম রায় ও সম্পাদক প্রশান্ত বিশ্বাস বাবু অভিযোগ করেছেন চলতি বছরের মে মাসে ও তার পূর্বে উপজেলার মঠবাটী গ্রামের ছইল উদ্দিন সরদার, ঘোষাল গ্রামের আব্দুল্লাহ গাজী ও খবির গাজী, রেজাউল গংরা লোকজন দিয়ে দু'দফায় বনায়নের বড় একটি অংশ জমিতে বাঁধ দিয়ে দখল করে বাঁধ দেয়। জানাগেছে বর্তমানে এ জমিতে ডিড নিয়ে উপজেলার ঘোষাল গ্রামের এমদাদুল নামের এক ব্যক্তি চিংড়ি ঘের পরিচালনা করছেন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ইতোপূর্বে পরিবেশ বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সর্বশেষ গত ২৭ মে ২০১৯, খুলনা ৬ (পাইকগাছা-কয়রার) সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর কাছে অভিযোগ করেন। সংসদ সদস্য তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা দেন। ইউএনও এ ঘটনায় ওসি ও উপজেলা বণ কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বললেও আজও তার প্রতিকার মেলেনি।

হাড়িয়া সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি সম্পাদক সহ কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, সদস্য কামরুল হাওলাদার, ফজলু হাওলাদার ও রাবেয়া বেগম অভিযোগ করেন নাফনা, কোদাল দিয়ে গোল পাতা গাছের ঝাড় নষ্ট করে দিচ্ছে তেমনি কেঁটে ফেলছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। অন্যদিকে লবণ পানি আটকে থাকায় বিভিন্ন গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ এ ঘটনার জন্য তারা উপজেলা বণ কর্মকর্তারকে দ্বায়ী করছেন।

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে ঘের মালিক এমদাদুল হক বলেন আমি আব্দুল্লাহ খবির ও রেজাউল গংদের কাছ থেকে ডিড নিয়ে ঘের করছি। তিনি এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

তবে বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় বলেন বনায়নের সময় কেউ সম্পত্তি দাবী করেনি কিন্তু এখন দখলদাররা তাদের সম্পত্তি দাবী করছে। তিনি আরো বলেন এমপির কাছে অভিযোগ ও থানায় বসাবসি হলে জমি পরিমাপের সিদ্ধান্ত হলেও আজো তার বাস্তবায়ন হয়নি।

সদ্য যোগদানকারী বিভাগীয় বণ কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, বনায়নের জমি দখলের বিষয়ে কিছুই জানিনা। তবে তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানার পর বিষয়টির তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

পিএনএস/মো. শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন