বুলবুলের আঘাতে লণ্ডভণ্ড মোড়েলগঞ্জে ১০ হাজার ঘরবাড়ি

  11-11-2019 07:40PM

পিএনএস, বাগেরহাট প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট ‘ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলে’র ব্যাপক আঘাতে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে ১০ হাজারের বেশী কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ন বিধস্ত হয়েছে। প্রায় লক্ষাধিক গাছপালা লণ্ডভণ্ড, ধসে গেছে কাঁচা-পাকা রাস্তা ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

রোববার সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দীর্ঘক্ষণ এ বুলবুল আঘাত হানে। যদিও শনিবার রাত ৮টার পর থেকে গুঁটি গুঁটি বৃষ্টি ও জড়ো হাওয়া শুরু হয়। ভোর রাত থেকেই প্রবল বাসাতের বেগ বেড়ে ভারী বর্ষণ নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে বাড়িঘর রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গোটা উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌর শহর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের বাইপাস সড়ক, পুরাতন থানা সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ও মোড়েলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা এলাকায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌর শহরের ৫০টি পাকা বাড়ি, আধা পাকা ৭শ’ ৩৭, বসতবাড়ি ও কাঁচাবাড়ি ৯ হাজার ৩শ’ ২০ মোট ১০ হাজার ১শ’ ৭টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ন বিধস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৩শ’ ২০ কাঁচা বসতঘর। নদীর তীরবর্তী পঞ্চকরণ, বহরবুনিয়া, বলইবুনিয়া, হোগলাবুনিয়া, খাউলিয়া, বারইখালীর, মোড়েলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও পৌর শহরসহ পাকা ও রাস্তা অতিরিক্ত পানির স্রোতে ধসে পড়েছে।

ভেসে গেছে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন, জিউধরা, বারইখালী ও বহরবুনিয়ার ২ হাজার মৎস্য ও কাঁকড়া ঘের। গরু ৫, ছাগল ১০ ও ৪টি মহিষ গোয়াল ঘর চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে ৪ হাজার ৬শ’ ৪০টি হাঁস মুরগী ও টার্কি। গো খাদ্য নষ্ট হয়েছে ৩শ’ ৩৬ টন, কাঁচা ঘাস ১শ’ ৯৯ টন।

কৃষি খাতে আমন ধানে ২৬ হাজার ৩শ’ ৭৫ হেক্টর ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষে ক্ষতি হয়েছে, ৫০ হেক্টর খেসারী, ১০ হেক্টর মরিচ সম্পূর্ন বিধস্ত হয়েছে, ২৫ হেক্টর পান চাষে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। চিংড়াখালী ইউনিয়নের ২৫ হেক্টর জমিতে কলা চাষ সম্পূর্ন বিধস্ত হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতাধিক প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে। বিদুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোটা উপজেলায়। ঝড়ের কবলে ভেঙ্গে পড়েছে ৬০টি বিদ্যুৎসংযোগের খুটি, ৩৩ কেভি লাইনের তার, ২৫টি ক্রসআর্ম ভেঙ্গে গেছে। শনিবার রাত ২টা থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে।

এ সর্ম্পকে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম সাইফুল আহম্মেদ জানান, বুলবুলের ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইনের কাজ আমরা জনবল বৃদ্ধি করে ৫২টি টিম মাঠ পর্যায়ে শুরু করেছে। আশা করছি ২/৪দিনের মধ্যেই বিচ্ছিন্ন হওয়া সকল সংযোগ চালু করা হবে সোমবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের গুরুত্বপূন পয়েন্টে বিদুৎসংযোগ পাবে।

এ ব্যাপারে কন্টোলরুমে দায়িত্বরত ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে এ উপজেলার প্রতিটি সেক্টরেই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে প্রাথমিকভাবে একটি ক্ষতির তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.কামরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সচেতনতার কারনে এবারে সকলেই সাইক্লোন মুখি হয়েছে, তাই কোন প্রাণহানী ঘটেনি। বন্যা পরবর্তীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার জন্য সড়কের ওপরে ঝড়ে পরে যাওয়া বড় বড় গাছ ফায়ারসার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবকের সহায়তায় অপসারন করা হচ্ছে।

প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া আমাশার এ কারনে স্যালাইন ও পানিবাহিত ট্যাবলেট মজুদ রাখা হয়েছে। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যেমে ডেউটিন বিতরণ করা হবে তিনি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরুপন করা হচ্ছে।

পিএনএস/মো. শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন