৬ বছর ধরে শিকলবন্দি মোনতাজ

  19-01-2020 08:49PM

পিএনএস ডেস্ক : নাম মোনতাজ উদ্দিন (৩০)। ছয় বছর ধরে একটি ঘরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে তাকে। অর্থের অভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন এ তাক সুচিকিৎসাও করা যাচ্ছে না। মানসিক ভারসাম্যহীন ও দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী এ ছেলেকে নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তার বৃদ্ধ মা দোলেনা খাতুন।

প্রতিবন্ধী মোনতাজ উদ্দিন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় উপজেলার চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের ষাইটকাহন গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, মোনতাজ নামের ওই যুবকের এক চোখ অন্ধ। তিনি বাক প্রতিবন্ধী। ছয় বছর আগে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। প্রাথমিক পর্যায়ে কবিরাজী ও ডাক্তারি চিকিৎসা করেও তাকে সুস্থ করা যায়নি। এক পর্যায়ে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। বাড়ির লোকজনসহ আশপাশের লোকজনদের মারধর শুরু করে সে। এরপর থেকেই তাকে বাড়ির একটি ঘরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। ওই ঘরেই কাটছে তার দিনকাল। তিন ভাই ও চার বোন রয়েছে তার। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। ভাইয়েরা কোনো রকমে নিজেদের সংসার চালাচ্ছেন। বোনদেরও বিয়ে হয়ে গেছে। বৃদ্ধ মা দোলেনা খাতুন মানসিক ভারসাম্যহীন এ ছেলেকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। আশপাশের লোকজনের বাড়ি থেকে চেয়ে খাবার আনছেন। নিজে খাচ্ছেন তাকেও খাওয়াচ্ছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন ও দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী এ ছেলের একটি প্রতিবন্ধী কার্ডের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে ছুটাছুটি করেও ভাতার কার্ড জোটেনি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

মোনতাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পশ্চিম পাশের একটি দু’চালা টিনের ঘর। ওই ঘরের একটি পিলারের সঙ্গে মোনতাজের ডান পা শিকল দিয়ে বাধা। ঘরের দক্ষিণ পাশ খানিকটা খোলা। ওই ঘরের মেঝেতে একটি কাঁথা দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় বসে আছেন তিনি। প্রায় সময় উলঙ্গ অবস্থায় থাকে তিনি। ওই ঘরেই তার খাওয়া-দাওয়া, পোষাব-পায়খানা ও ঘুমানো। দীর্ঘদিন এভাবে থেকে অনেকটাই উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছেন মোনতাজ। মোনতাজ উদ্দিনের বয়োবৃদ্ধ মা দোলেনা খাতুন জানান, প্রায় ছয় বছর ধরে তার ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। গ্রাম্য কবিরাজি চিকিৎসাসহ দুলালপুর নামের একটি এলাকায় নিয়ে সেখানে ১৫দিন থেকে কবিরাজের চিকিৎসা দেওয়ায় কিছুদিন ভাল ছিল। পরে আবারও তিনি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর কিশোরগঞ্জ নিয়ে একজন ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু ভালো হয়নি। সংসারের অভাব অনটনের কারণে উন্নত চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য এলাকার অনেক লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।

এছাড়া একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে ছুটাছুটি করেও কোন কাজ হয়নি।

এ ব্যাপারে চণ্ডিপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামছুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোনতাজ উদ্দিন যে প্রতিবন্ধী তা আগে শনাক্ত করতে হবে। পরে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের আওতায় আনা হবে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, মোনতাজ উদ্দিনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে অচিরেই তাকে ভাতার কার্ডের আওতায় আনা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদ হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন