কুলাউড়ায় কৃষকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শ্রমিকরা!

  26-01-2020 09:08PM

পিএনএস ডেস্ক : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কৃষকদের কাছ থেকে ধীরগতিতে আমন ধান সংগ্রহ চলছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন কৃষকরা। ধান পরিমাপ ও চেকিং করার কথা বলে কৃষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক মোটা অংকের টাকা আদায় করে নিচ্ছে ধান সংগ্রহে নিয়োজিত ঠিকাদারের শ্রমিকরা। এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় একটি পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়নে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ২৪ হাজার ৫০০ জন কৃষক আমন চাষ করেছে। চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহের জন্য মোট চার হাজার ৪৯৬ জন কৃষক তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে দুই হাজার ২৪২ কৃষক সরকারের কাছে সরাসরি ধান বিক্রির সুযোগ পেয়েছেন। ৩ মাসে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২২৪২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে ধান সংগ্রহ অভিযানের ১ মাস ২৬ দিন পার হলেও ধান ক্রয় করা হয়েছে মাত্র ৬৫০ মেট্রিক টন। এ হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ১১ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। ধান ক্রয়ের কার্যক্রম চলবে আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বাকি সময়ে ২২৪২ মেট্রিক টন ধান ক্রয় আদৌও সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন কৃষকরা। ধান সংগ্রহ কম হচ্ছে বলে স্থানীয়ভাবে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্র জানা গেছে, লটারি বাছাইয়ে নির্ধারিত ২২৪২ জন কৃষকের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে এই ধান। প্রতি কৃষকের জন্য সর্বোচ্চ ১ টন ধান বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতি টন ধানের মূল্য ধরা হয়েছে ২৬ টাকা। কেনার ক্ষেত্রে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ ধানের আদ্রতা নির্ধারণ করেছে ১৪ শতাংশ। গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে আমন ধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়।

সরেজমিন রবিবার দুপুরে উপজেলা খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কৃষকরা তাদের ধান নিয়ে এসেছেন। অনেকেই সপ্তাহ খানেক আগে ধান জমা দিয়েছেন কিন্তু টাকার রসিদ এখনো পাননি। কারণ সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নেই। সেই সুযোগে ধান সংগ্রহে নিয়োজিত ১৪ জন শ্রমিকরা কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে টনপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা করে অর্থ আদায় করে নিচ্ছেন। কোনো কৃষক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শ্রমিকরা ধান পরিমাপ ও গ্রহণ করবে না বলে হুঙ্কার দেওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে কৃষকরা টাকা দিচ্ছে। খাদ্যগুদামের কর্মচারী মনিন্দ্র সিংহ আদ্রতা চেক করার সময় কৃষকদের কাছ থেকে ১০০-১৫০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৫০ জন কৃষকের মধ্যে অনেকের কাছ থেকে টনপ্রতি ৩০০ টাকা করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে আসা কাদিপুরের কৃষক আব্দুল কাইয়ুম, ছনর মিয়া, সুনু মিয়া, টিলাগাঁওয়ের কৃষক জয়নাল মিয়া, চিনু ক্বারী, অরুণ দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক কষ্ট করে গোলায় ধান তুলেছি। আর সেই ধান সরাসরি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে দায়িত্বরত শ্রমিকরা আমাদের কাছে জোরপূর্বক ধান পরিমাপে ৩০০ টাকা ও ধানের আদ্রতা চেকিংয়ের জন্য ১০০-১৫০ টাকা করে নিচ্ছেন। তাদের কথা না শুনলে তারা ধান পরিমাপ করবে না বলে আমাদের হুঙ্কার দেয়।

কাদিপুর ইউনিয়নের ছকাপন গ্রামের কৃষক মাসুক মিয়া জানালেন, গত বৃহস্পতিবার ধান জমা দিয়েছেন কিন্তু এখনো টাকার রসিদ পাননি এজন্য ব্যাংক থেকে টাকাও তুলতে পারছেন না।

পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ভাটগাঁও গ্রামের কৃষক মজির মিয়া বলেন, তাদের এলাকার দুজনে কাছ থেকে ধানের আদ্রতা চেক করার জন্য ২০০ টাকা নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মচারী।

ধান সংগ্রহে নিয়োজিত শ্রমিকদের সর্দার নেত্রকোণার বাসিন্দা বকুল মিয়া বলেন, ধান পরিমাপে কৃষকরা খুশি হয়ে যা দিচ্ছে তা আমরা নিচ্ছি। কৃষকরা টাকা না দিলে আমাদের পোষায় না। তাই টাকা নিচ্ছি।

ধান সংগ্রহে নিয়োজিত ঠিকাদার আকবর আলী বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেবার কোনো নিয়ম নেই। আমার কোনো শ্রমিক যদি টাকা নিয়ে তাকে তাহলে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

কুলাউড়া খাদ্য গুদামের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন মিয়া বলেন, গাড়ি থেকে ধান নামাতে গিয়ে কৃষকরা খুশি হয়ে শ্রমিকদের টাকা দিচ্ছে। আর ধান পরিমাপে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা না নিতে শ্রমিকদের আগ থেকেই বলে আসছি।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার দেব বলেন, আবহাওয়া প্রতিকূলে না থাকায় ধান ক্রয়ে একটু ধীরগতি হয়েছে তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে তিনি জানান। আর অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, গুদামের ভিতরে ধান পৌঁছে দেবার পর কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নেবার কোনো সুযোগ নেই। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ধান সংগ্রহের ঠিকাদারদের সাথে সভা করা হয়েছে কৃষকদের কাছ থেকে কোনো টাকা না নেবার জন্য।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ধান সংগ্রহে অভিযোগ কিংবা অনিয়মে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষকদের কাছ থেকে টাকা বা হয়রানি যাতে না করা হয় সেজন্য দুটি ব্যানার গুদামে লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছি।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন