মসজিদের দানবাক্সে দেড় কোটি টাকা

  16-02-2020 12:19AM



পিএনএস ডেস্ক: কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবারও মিলেছে ১ কোটি ৫০ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৮ টাকা এবং বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণ-রৌপ্যালঙ্কার।

৩ মাস ১৯ দিন পর শনিবার সকালে মসজিদের পাঁচটি দানবাক্স খোলা হয়। জেলা প্রশাসন নিয়োজিত তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,রূপালী ব্যাংকের ডিজিএম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটির উপস্থিতিতে এ সব দানবাক্স সকালে খোলা হয়।

রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি মসজিদ ক্যাম্পাসে অবস্থিত মাদ্রাসা এবং এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টাকা গোনবার কাজে অংশ নেন। বিকাল সাড়ে ৪টায় টাকা গোনা শেষ হয়।

এর আগে গত বছরের ২৬ অক্টোবর এ সব দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ১ কোটি ৫০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৯৮ টাকা এবং বিদেশি মুদ্রাসহ ও স্বর্ণ-রৌপ্যালঙ্কার।

মসজিদটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন বলছে, এ সব অর্থ এ মসজিদ, মসজিদ ক্যাম্পাসে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ জেলার সব মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির প্রবীণ সদস্যদের মতে, এখানে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়- এমন ধারণা থেকে দেশ-বিদেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এখানে এসে দান করে থাকেন।

জানা গেছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে।

মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নির্বিশেষে সব লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন এলাকাবাসী।

কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে দেশের দূর-দূরান্তের এমনকি দেশ-বিদেশের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে।

তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ, রূপা, অলঙ্কার এবং বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করে থাকেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে।

আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ' বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির প্রবীণ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান এবং পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, দীর্ঘদিনের বিশ্বাসের জায়গা থেকে এ ঐতিহাসিক মসজিদটি সব ধর্মের মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তাই মনের বাসনা-কামনা পূরণে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এখানে মানত নিয়ে আসেন।

মসজিদের দানবাক্সের দানের হিসাব তদারকি কাজে নিয়োজিত কিশোরগঞ্জ জেলা কালেক্টরেটের সহকারী কমিশনার ও সহকারী কমিশনার মো. ফজলে রাব্বি জানান, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গঠিত কমিটি এ ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের আয়-ব্যয় নিরীক্ষা করা হয়।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, এ মসজিদের দানের এ বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্সের উন্নয়ন, কমপ্লেক্সে অবস্থিত মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানার ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদানে ব্যয় হয়।

পাশাপাশি জেলার অন্যান্য মসজিদ-মাদ্রাসা, এতিমখানার মতো প্রতিষ্ঠান এবং দুঃস্থ ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত অসহায় মানুষকেও এ তহবিল থেকে অর্থ সহয়তা প্রদান করা হয়ে থাকে।

পিএনএস/হাফিজ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন