শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন শিক্ষকরা

  23-02-2020 04:52PM

পিএনএস ডেস্ক : শিক্ষার্থীদের কাছে থাকবে বিনামূল্যের সরকারি পাঠ্য বই। আর সেই পাঠ্য বইয়ের আলোকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাবেন শিক্ষকরা। কিন্তু সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে পাবনার চাটমোহরে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডার গার্ডেন স্কুলগুলোতে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন শিক্ষকরা। কৌশলে প্রকাশনা সংস্থাগুলো গাইড বইয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘সহায়ক বই’ হিসেবে বাজারে ছেড়ে বিক্রি করাচ্ছেন। এতে মূল বই না পড়ে গাইড বই পড়ে মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা! অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সন্তানদের এসব বই পড়াতে নারাজ অভিভাবকরা। তবুও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষকদের মৌখিকভাবে চাপিয়ে দেওয়া গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা।

জানা গেছে, উপজেলার ১৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অর্ধশতাধিক কিন্ডার গার্ডেনের মধ্যে বেশিরভাগ স্কুলেই চলছে এসব ‘সহায়ক বই’ বা গাইড বই। ‘নোট গাইড’ উচ্চ আদালত থেকে নিষিদ্ধের পরও সেগুলোর নাম পাল্টে এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ‘সহায়ক বই’ হিসেবে। বছরের শুরুতেই প্রকাশনার প্রতিনিধিদের সাথে গোপনে মৌখিক চুক্তি সম্পাদন করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা পরিচালকরা। উপঢৌকন ও মোটা অংকের কমিশন খেয়ে শিক্ষকরা তাদের পছন্দের ‘সহায়ক বই’ (গাইড বই) কিনতে বলছেন শিক্ষার্থীদের। প্রকাশনী সংস্থার গোপন চুক্তিতে নেওয়া কমিশনের টাকায় ছুটির দিনে বনভোজনে যাচ্ছেন বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডার গার্ডেনের শিক্ষকরা। অনেক প্রতিষ্ঠানে তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন এই উপঢৌকনের টাকা। তবে নিজেদের মধ্যে নামমাত্র চাঁদা নিয়ে আর প্রকাশনা সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছ থেকে নেওয়া কমিশনের টাকায় বনভোজনে যোগ দিচ্ছেন খোদ শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তারা।

অনেক সচেতন অভিভাবক এসব সহায়ক বই কিনতে অনীহা দেখালেও শেষ পর্যন্ত সন্তানদের চাপে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনো কোনো স্কুলে একজন শিক্ষার্থীকে একাধিক গাইড বা সহায়ক বইও কিনতে হচ্ছে। আর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরাও মূল বই না পড়িয়ে সহায়ক বই পড়াচ্ছেন। এতে শিক্ষার গুণগত মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, একজন সহকারী শিক্ষা অফিসারের এক নিকটাত্মীয় প্রভাব খাটিয়ে ‘চ্যান্সেলর’ নামের সহায়ক বই শিক্ষার্থীদের কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে চাপ প্রয়োগ করছেন প্রধান শিক্ষকদের।

সহায়ক বই কিনতে আসা আফজাল হোসেন নামের এক ভ্যানচালক বলেন, ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল থেকে বলেছে গাইড বই লাগবে। কিন্তু দামের কথা শুনে না কিনে ফিরে আসি। সারাদিন খেটে যা আয় করি তাই দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। বই কিনব কীভাবে? দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া ছোট ভাইয়ের জন্য মিলন হোসেন নামে এক যুবক বলেন, মূল বই না পড়ে বিষয়বস্তু না বুঝেই পড়া মুখস্ত করছে সবাই। এতে কতটা জ্ঞান বৃদ্ধি হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ হয়। কিন্তু উপায় নেই, ছোট ভাইয়ের চাপে বাধ্য হয়ে গাইড বই কিনতে এসেছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, কোনো শিক্ষার্থীকে এসব বই কিনতে বলা হয় না। উল্টো অভিভাবকরা নিজেরাই এই বইগুলো কিনে থাকেন। আর দোষ দেন শিক্ষকদের। তবে মাঝেমধ্যে কিছু বিষয়ে আটকে গেলে সহায়ক বই থেকে সমাধান বের করা হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে গাইড বই এখন নাম পাল্টে সহায়ক বই নামে বিক্রি হচ্ছে। স্কুলে সেগুলো পড়ানো সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে কিছু শিক্ষক -শিক্ষার্থীদের সেগুলো কেনার কথা বলেছেন বলে শুনেছি। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন