দক্ষিনঞ্চলের হাট-বাজার পলিথিনে সয়লাব

  23-02-2020 05:17PM

পিএনএস, বরিশাল প্রতিনিধি : পরিবেশ অধিদপ্তর নামে বরিশালে একটি মন্ত্রনালয়ের আঞ্চলিক দপ্তর থাকলেও পলিথিনমুক্ত করা যাচ্ছে না বরিশাল শহর থেকে শুরু করে গ্রামঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কয়েক বছর আগে নগরীতে পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করলেও একটি দিনের জন্যও এ ঘোষণা কার্যকর হয়নি। এমনকি বেশ কিছু দিন ধরে বরিশালে তেমন বড় ধরনের কোন পলিথিনবিরোধীর অভিযান হয়নি। তবে কিছুদিন আগে বরিশালের জননী কুরিয়ার সাভিংস ও এসএ পরিবহন থেকে প্রশাসনের যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমানের পলিথিন উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে গতবছর গত ২৭ জানুয়ারী নগরীর রূপাতলী আক্কেল আলী সড়ক থেকে বিপুল পরিমান পলিথিন উদ্ধার এটাই প্রমান করে যে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এই পরিবেশ বিনাশি বানিজ্য। পরিবেশ অধিদপ্তরের পলিথিনবিরোধী অভিযানের শিথিলতার কারণে দক্ষিনঞ্চলের সব হাট-বাজার গুলোতে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ দত্ত বলেন, তার দেখা মতে নগরীর কোনো বাজারই পলিথিনমুক্ত নয়। দোকানিরা প্রকাশ্যেই পলিথিন ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর সব দেখে-শুনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জেলা প্রশাসনেরও তেমন কোনো নজরদারি নেই।

বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর নগরীর সাগরদী বাজার, চৌমাথা বাজার, বটতলা বাজার, নতুনবাজার এবং বড়বাজার আনুষ্ঠানিকভাবে পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার আগে বাজারগুলোতে ব্যাপক প্রচারণা ও মনিটরিং কমিটিও করে দেওয়া হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। এ কার্যক্রমে দপ্তরটির প্রচার খাত থেকে অর্থ ব্যয় করা হলেও বাস্তবে একটি বাজারও পলিথিনমুক্ত হয়নি।

সাগরদি বাজার পলিথিনমুক্ত ঘোষণায় গঠিত কমিটির আহ্বায়ক বলেন, শুরুতে ঠিক থাকলেও এখন সব জায়গায় পলিথিন চলে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলা হয়েছিল, সাইকেলে করে যারা বাজারে পলিথিন নিয়ে যায় তাদের ধরা হোক। কিন্তু তা শুনেনি তারা। চৌমাথা বাজার পলিথিনমুক্ত ঘোষণায় গঠিত কমিটির আহ্বায়ক বলেন, পলিথিনমুক্ত বাজার ঘোষণার পর একাধিকবার পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সভা কিংবা মনিটরিং করার জন্য বলা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। যে কারণে বাজারকে পলিথিনমুক্ত করা যায়নি। পরিবেশবাদীদের মতে, যত্রতত্র পলিথিন ব্যবহারের ফলে এসব পলিথিন ময়লা আবর্জনার সাথে নালা নর্দমায় আটকে গিয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। পাশাপাশি বর্ষার কালে পলিথিনের বর্জ্য নগরীর বিভিন্ন ড্রেনে আটকা পরে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়াও কৃষিজমিতে পলিথিন পড়ে অক্ষয় অবস্থায় থাকছে। ফলে অর্থকরী ফসল কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন আশানুরুপ হচ্ছে না। অপরদিকে পলিথিনের যাবতীয় বর্জ্য বর্ষাকালে খাল ও নদী হয়ে সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। পরে এসব পলিথিনের বর্জ্য লবণাক্ত পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আবার লবণচাষিরা সমুদ্রের লবণাক্ত পানি দিয়ে তৈরি করছে রান্নাবান্নার অন্যতম উপাদান লবণ। যা খাবারের সাথে মিশে এসব পলিথিন মিশ্রিত লবণ মানবদেহে প্রবেশ করছে। এতে বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অকালে মানুষ মৃত্যুবরণ করলেও পলিথিন ব্যবহারে কেউ সতর্ক হচ্ছে না। বরিশাল নগরের বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা গেছে,পলিথিন ছাড়া কোন মাল হচ্ছে না। পানের দোকান থেকে শুধু করে সব দোকানেই পলিথিনই হলো ব্যাবসায়ীদের ভরসা। পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহারে জেল জরিমানাসহ উভয় শাস্তি বিধিবিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের অর্থলোভের কারণে এ দেশের অসংখ্য নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রেতারা দীর্ঘদিন থেকে অধিক মুনাফার লোভে এ নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তবে মাঝে মাঝে বরিশালে নগরীতে বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে পলিথিন উদ্ধার করতে দেখা যায়। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের তেমন কোন ভূমিকা দেখা যাচ্ছে।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন