মসজিদের ইমামকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো, গ্রেপ্তার ১

  04-06-2020 07:59PM

পিএনএস ডেস্ক : বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে শালিস বিচারে মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার অফিস সহকারীকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার উপজেলার দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়। গ্রেপ্তার করা হযেছে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বজলুর রহমান আকনকে।

মেহেন্দীগঞ্জ থানার ওসি আবেদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, এক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে দড়িচর-খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী শহিদুল ইসলাম আলাউদ্দিনকে বুধবার বিকেলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে জুতার মালা পরিয়ে বাজারে ঘোড়ানো হয়। তখন চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন ইউপি সদস্য এবং শতাধিক লোক সেখানে উপস্থিতি ছিলেন।

উৎসুক একজন এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে সন্ধ্যার পরে তা ভাইরাল হয়। এনিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয় হয়েছে সকল মহলে।
শহিদুল ইসলাম মাদ্রাসায় চাকরি করার পাশাপাশি স্টীমারঘাট সংলগ্ন সিকদার বাড়ি জামে মসজিদে ইমামতি করেন।

ওসি আবেদুর রহমান বলেন, লাঞ্ছনার ঘটনায় ইমাম আলাউদ্দিন ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীসহ ৯ জনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বৃহস্পতিবার মামলা করেছেন। বজলু আকন নামের স্থানীয় এক মাতব্বরকে আটক করা হয়েছে। চেয়ারম্যানসহ অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন, একজনের গলায় জুতার মালা পরানো গর্হিত কাজ। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীকে সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই তার বিরুদ্ধে আইনগত এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মসজিদের ইমাম শহিদুল ইসলাম আলাউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীর অভিবাবক যথাসময়ে উপস্থিত না থাকায় তিনি নিজের মোবাইল উল্লেখ করে উপবৃত্তির তালিকা পাঠান। পরে ওই নম্বরে ৪৮০০ টাকা আসে। মাদ্রাসা বন্ধ এবং বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় এ খবর তিনি শিক্ষার্থীর অভিবাবকদের জানাতে ভুলে যান। এতে ওই শিক্ষার্থীর বাবা গত ৩০ মে মাদ্রাসায় গিয়ে তাকে মারধর করেন। বুধবার ইউনিয়ন পরিষদের ডেকে নিয়ে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীর উপস্থিতিতে তাকে জুতার মালা পরানোসহ শারীরিরকভাবে নাজেহাল করা হয়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়- ইউনিয়ন পরিষদে বিচারকালে ইমাম আলাউদ্দিনের গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে দিয়ে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী তাকে শাসাচ্ছেন। একই সময়ে সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর খালু ইউপি সদস্য ছত্তার ইমাম আলাউদ্দিনের কাছে গিয়ে তার মাথার টুপি নিয়ে যান। পরে তাকে বাজারে ঘোরানো হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চারদিকে সাধারণ মানুষের জটলা দেখা গেছে। নির্যাতনের শিকার ওই ইমাম ছিলেন বিমর্ষ।

জানা গেছে, শালিস বিচারে চেয়ারম্যান ছাড়াও ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শহিদুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. ফিরোজ, গ্রেফতার হওয়া স্থানীয় প্রভাবশালী বজলু আকন, আবুল বয়াতী, মো.কামরুজ্জমান, রিন্টু দেওয়ান সহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

দড়িচর-খাজুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী দাবি করেন, মাদ্রাসার অফিস সহকারী আলাউদ্দিন ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতসহ ইন্সুরেন্স কোম্পানির চাকরি করে অনেকের টাকা আত্মসাত করেছেন। এনিয়ে বুধবার শালিসে তাকে সকল টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছিল। অনথ্যায় তাকে জুতার মালা পরতে বলা হয়। আলাউদ্দিন স্বেচ্ছায় জুতার মালা পরেছেন। পরে সকলের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদে জুতার মালা পরা ইমাম আলাউদ্দিনকে ঘোরানো হয়।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন