তরমুজের নতুন দুই জাত উদ্ভাবন

  22-09-2020 02:04AM

পিএনএস ডেস্ক : দেশেই বীজ উৎপাদন সম্ভব এমন দুটি তরমুজের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা। বারি’র সবজি বিভাগ এবং আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, লেবুখালি, পটুয়াখালির যৌথ উদ্যোগে এ দুটি জাত উদ্ভাবন করা হয়।

দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত বিশুদ্ধ লাইন থেকে উদ্ভাবিত এ দুটি ওপি (ওপেন পলিনেটেড) জাতের একটির ভেতরে মাংসল অংশ হলুদ এবং অপরটির ভিতরের অংশ হলো টকটকে লাল। শিগগিরই এ জাত দুটি নিবন্ধনের মাধ্যমে মুক্তায়িত করা হবে বলে জানান তারা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পটুয়াখালির লেবুখালি আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, এ জাত দুইটি নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে গাবেষণা কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাত দুইটির চূড়ান্তভাবে বাছাইকাজ সম্পন্ন করা হয়। এ জাতগুলো উদ্ভাবনে তিনি ছাড়াও আরো যারা কাজ করেছেন তারা হলেন, একই আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইফতেখার মাহমুদ এবং বারি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ইদ্রিস আলী হাওলাদার।

ওই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরো বলেন, হলুদ জাতের তরমুজটি অন্য জাতটির চেয়ে তুলনামূলক বেশি মিষ্টি। এটি খেতেও অন্যটির চেয়ে বেশি কচকচে। সারা বছর চাষ উপযোগী এ জাতের প্রতিটি তরমুজের ওজন হয় সাড়ে তিন থেকে চার কেজি এবং হেক্টর প্রতি ২৫/৩০ টন ফলন হয়। হলুদ জাতের প্রতিটি ফলে ১২০ টির মতো বীজ হয়।

অপরদিকে ভেতরে লাল থাকা তরমুজটিও সারা বছর চাষ উপযোগী। এ জাতটি অফ সিজনে প্রতিটির ওজন ৪/৬ কেজি এবং সিজনে প্রতিটির ওজন হয় ৬/৮ কেজি। জাতটি অফ সিজনে প্রতি হেক্টর ২০/২৫ টন এবং সিজনে প্রতি হেক্টরে ৩০/৩৫ টন তরমুজ উৎপাদন হবে। এ জাতের প্রতিটি ফলে বীজ থাকে ২৫০টির মতো।

উভয় জাতের তরমুজের বাইরের ত্বক সবুজ থাকলেও একটির ভেতরের মাংসল অংশ হয় হলুদ এবং অপরটি হয় লাল রঙয়ের। তরমুজ চাষে সিজন হলো ফেব্রুয়ারি-মে এবং বাকি সময় অফ সিজন। অফ সিজনে তরমুজ মাচায় চাষ করতে হয়। জাত দুটি এখন বাংলাদেশ বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির মাধ্যমে অবমুক্তির অপেক্ষা রয়েছে।

সোমবার গাজীপুরে এ দুটি জাতের গবেষণা মাঠ পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং বারি’র মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বারি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. মিয়ারুদ্দীন, পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) ড. মো. কামরুল হাসান, পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) ড. মুহাম্মদ সামসুল আলম, সবজি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌসি ইসলাম, জাত উব্ধাবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাবৃন্দ।

বারি’র প্রটোকল অফিসার মো. আল আমিন জানান, জাত উদ্ভাবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বারি’র আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে যেসব উন্নতমানের তরমুজ পাওয়া যায় তার প্রায় সবই জাপান বা অন্যান্য দেশ যেমন- চীন, থাইল্যান্ড, ভারত থেকে আমদানিকৃত শংকর জাতের বীজ থেকে উৎপাদন করা হয়। ফলে তরমুজের বীজ আমদানি বাবদ প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়। এছাড়া এসব জাতের বীজের বিশুদ্ধতা ও অঙ্কুরোদগম হার সবসময় ঠিক না থাকায় কৃষকরা প্রতারিত হয়ে থাকেন। কিন্তু বারি উদ্ভাবিত জাত দুটি থেকে কৃষক নিজেই বীজ উৎপাদন করতে পারবে।

তিনি বলেন, এদের ফলন, আকৃতি, স্বাদ ও মিষ্টতা প্রচলিত জাপানি শংকর জাতের চেয়ে উন্নততর। এছাড়া এ জাত দুটি বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী অমৌসুমী জাত হওয়ায় কৃষক এখান থেকে অধিক লাভবান হবে। হাইব্রিড জাত হিসেবে মুক্তায়িত হওয়ার পর ব্যাপক সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে বীজ আমদানি বাবদ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানো সম্ভব হবে এবং তরমুজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন