সরাইলের সেই খাল উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে পরিবেশ অধিদপ্তর

  23-11-2020 09:38PM

পিএনএস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ খালটি দখলের পর ভরাট হয়ে গেছে বহু আগেই। ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে উপজেলা সদরের অন্নদা হাইস্কুল মোড় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ দূর্ভোগের শিকার হন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সেখানকার জনদূর্ভোগের বিষয়টি প্রকাশ পায়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ অন্নদা হাইস্কুল মোড়ের জনদূর্ভোগ দূর করতে উদ্যোগ নেয় সরাইল উপজেলা পরিষদ।

গত চারদিন আগে সরকারি মোটা অংকের অর্থায়নে অন্নদা হাইস্কুল মোড় থেকে পূর্ব দিকে উচালিয়াপাড়া মোড় এলাকা পর্যন্ত সরাইল-অরুয়াইল আঞ্চলিক সড়কের ফুটপাত ঘেঁষে একটি বিশাল আকারের ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর। সেখানে বেকু মেশিনে মাটি কাটা শুরু হয় সড়কের পাশ দিয়ে। কিন্তু এতে আপত্তি তোলেন স্থানীয় নানা পেশার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এনিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জনকল্যাণে এখানে সরকারি অর্থায়নে ড্রেন নির্মাণ হলে, পাশের সরকারি খাল কার কল্যাণে দখলে রাখা হয়েছে? এছাড়া সড়কের ফুটপাতে ড্রেন নির্মাণ হলে সড়ক ছোট হয়ে যাবে; এতে নতুন করে এখানে আবার জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হবে। কেউ কেউ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পাশের সরকারি সেই খালের দখল শক্ত করতেই একটি মহল পরিকল্পিতভাবে এ ড্রেন নির্মাণ করাচ্ছে।’ অনতিবিলম্বে দখল হওয়া এ খাল দখলমুক্ত করে উন্মুক্তের দাবি এলাকাবাসীর।

এদিকে ফেসবুকের কল্যাণে আলোচিত সেই খাল উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে এসেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। আজ সোমবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে সরাইল সদরে দখল হওয়া খাল পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার উপ-পরিচালক বিশাল চক্রবর্তী। এসময়ে তার সঙ্গে ছিলেন নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর’-এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি শামীম আহমেদ ও অর্থ সম্পাদক শিপন কর্মকার। পরে সেখানে উপস্থিত হন সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিশাল চক্রবর্তী দখল হওয়া খাল ঘুরে দেখেন এবং এই খাল দখলমুক্তসহ উন্মুক্ত করতে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক’কে জানান, এই খাল দখল হয়েছে বহু আগেই। এখানকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। আমিও চাই এই খাল জনস্বার্থে উন্মুক্ত হউক; কিন্তু এ খাল দখলমুক্ত করা সম্ভব নয়। এখানে খাল ভরাট করে বিভিন্ন ব্যক্তি স্থাপনা নির্মাণ করে বসে আছেন। ইচ্ছে করলেই এতবড় খাল দখলমুক্ত করা আমার দ্বারা অসম্ভব। এজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ প্রয়োজন।

উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর উপ-পরিচালক বিশাল চক্রবর্তীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এ খালের কিছু কিছু অংশ একসময় জেলা পরিষদ লীজ দিয়েছিল; বর্তমানে সব লীজ বাতিল। ‘আপনার উদ্যোগে যদি এই খাল দখলমুক্ত করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ লিখিত অনুমতি দেন; তাহলে জনস্বার্থে আমি অর্থ ব্যয় করে পাঁচটি বেকু মেশিন লাগিয়ে এ খাল উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা করবো। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একাধিক সূত্র।

এ বিষয়ে নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর’-এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, আমরা বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে অবগত হয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর’কে জানিয়েছি। আমরা সরাইলের মানুষের কল্যাণে সেই জনগুরুত্বপূর্ণ খালটি দখলমুক্ত সহ উন্মুক্ত করাতে বিরামহীন কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাবো। আমরাও সরেজমিনে গিয়ে সেই খাল দেখে এসেছি। সেখানে সরকারি এতবড় খাল অবৈধ দখলে রেখে পাশ দিয়ে সরকারি অর্থ ব্যয় করে ড্রেন নির্মাণ করার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ লড়াই চালিয়ে যাব। এক্ষেত্রে সরাইলের মানুষ ও সেখানকার সাংবাদিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

পিএনএস/এসআইআর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন