ঘরে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী, রিকশা পুলিশের রেকারে, চালকের আত্মহত্যার চেষ্টা

  23-02-2021 03:03AM

পিএনএস ডেস্ক : মা, তিনভাই ও স্ত্রীকে নিয়ে জুম্মন নারায়ণগঞ্জে থাকেন। পরিবারের সদস্যরা বলেন, করোনায় পোশাক কারখানার কাজ হারিয়ে কয়েক মাস ধরে অটোরিকশা চালাচ্ছেন জুম্মন। কোনোরকমে সংসারটা চলছিল। এদিকে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর প্রসবের দিন ঘনিয়ে আসছে। হাসপাতালে নিতে টাকা জমাতে হবে।

জুম্মন সোমবারও সকাল আটটার দিকে বেরিয়েছিলেন। এর মধ্যেই দুপুর ১২টার দিকে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন জুম্মন রক্তে ভাসছেন। পুলিশ তাঁকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে যাচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের বাইরে দাঁড়িয়ে জুম্মনের ভাই মো. মানিক বলছিলেন এসব কথা। বিরতিহীনভাবে কাঁদতে থাকা মা জরিনা বেগম ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। ঘুরেফিরে তিনি একই প্রশ্ন করছিলেন, ‘আমার ছেলেটা বাঁচব তো?’

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সোমবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ জুম্মনকে আটক করেন ট্রাফিক পুলিশের উপসহকারী পরিদর্শক (এটিএসআই) রাশেদুল ইসলাম। স্থানীয়ভাবে জায়গাটি ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক ইউটার্ন নামে পরিচিত। রাশেদ চড়-থাপ্পড় দিয়ে জুম্মনের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা রেকার বিল দাবি করেন। ক্ষোভে-হতাশায় অটোচালক জুম্মন ধারালো ছুরি নিজের পেটে ঢুকিয়ে দেন।

অবশ্য এটিএসআই রাশেদ মুঠোফোনে বলেন, জুম্মনের অটোরিকশাটি আটক করা হয়নি এবং তার কাছে রেকারিংয়ের বিলও চাওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, জুম্মনের মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি (জুম্মন) মাদকাসক্ত। সংসারে অভাব–অনটনের কারণে তিনি নিজেই ছুরিকাঘাত করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।

ঘটনার পর সোমবার বিকেলে শিমরাইলের সাজেদা হাসপাতালের পেছনে খালি জায়গায় জুম্মনের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখা যায়। পাশেই ছিল ট্রাফিক পুলিশের রেকার (নওগাঁ-ই-৬১-০০০৩)।

ঘটনাস্থলে থাকা রেকারচালক মামুন মিয়া বলেন, ‘অটোরিকশা ধরার পর এটিএসআই রাশেদ স্যার ওইটা অস্থায়ী ড্যাম্পিংয়ে নিয়ে আসেন।’

তিনি আরও বলেন, ব্যাটারচালিত অটোরিকশা আটক করলে রেকার বিল দেড় হাজার টাকা আদায় করা হয়। মহাসড়কে অবৈধ তিন চাকার যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বেশি বেড়ে গেলে ট্রাফিক পুলিশ ধরে নিয়ে রেকার বিল আদায় করে।

স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক ইউটার্ন এলাকায় অবৈধভাবে মহাসড়কে উঠলে এবং নানা কারণে আশপাশ থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আটক করা হয়।

জুম্মনকে প্রথমে শিমরাইলের সুগন্ধা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ট্রাফিক পুলিশের দুই সদস্যই জুম্মনকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, জুম্মনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তখন পর্যন্ত কিছু বলার উপায় ছিল না।

পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন