ডিসি অফিসে চাকরি পেলো তৃতীয় লিঙ্গের জনি-মারুফ

  01-03-2021 06:05PM

পিএনএস ডেস্ক : রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেক্ট্রো মেডিক্যালে ডিপ্লোমা করেছেন মারুফ। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় ভালো কোনো চাকরি পাচ্ছিলেন না। ভুগছিলেন চরম হতাশায়। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল জলিল তার হতাশা দূর করে দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক মারুফকে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দিয়েছেন নিজের কার্যালয়ে। সোমবার (১ মার্চ) থেকে কাজে যোগ দিয়েছেন মারুফ। শুধু মারুফ একা নন, জনি হোসেন নামে তৃতীয় লিঙ্গের আরেকজনের চাকরি হয়েছে ডিসি অফিসে। অষ্টম শ্রেণি পাস করা জনি চাকরি পেয়েছেন অফিস সহায়ক হিসেবে। তাদের দু’জনকেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখায় দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত শনিবার নিজের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক তৃতীয় লিঙ্গের দুজনকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন দিনের আলো হিজড়া সংঘ ওই সভার আয়োজন করে।

জেলা প্রশাসক বলেছিলেন, দিনের আলো হিজড়া সংঘ যে দুজনকে চাকরির জন্য সুপারিশ করবে তাদের সুযোগ দেওয়া হবে। মার্চের ১ তারিখেই তারা যোগ দেবেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যতোদিন পর্যন্ত তাদের স্থায়ী করা না যাবে ততোদিন তারা জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বেতন পাবেন। এরপর দিনের আলো হিজড়া সংঘ জনি ও মারুফের নাম প্রস্তাব করে। রোববার তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে আসেন। সোমবার যোগ দেন কাজে।

চাকরি পেয়ে নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার বাসিন্দা মারুফ বলেন, ‘আমি ইলেক্ট্রো মেডিক্যালে পড়াশোনা করলেও কম্পিউটারের কোর্স করেছি। এখানে নতুন চাকরিতে এসে খুব ভালো লাগছে। এখানে স্যারেরা খুব ভালো। সহায়তা করেছেন। প্রথম দিনেই আমার খুব ভালো লাগছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতাম। আমার মেয়েলি আচরণের কারণে বাকিরা হাসাহাসি করতো। কাজের পরিবেশই নষ্ট হতো। তাই একটি ইস্যু তৈরি করে তারা আমাকে বাদ দিয়ে দেয়। করোনার মধ্যে বসেই ছিলাম।’

চাকরি পাওয়া জনি হোসেন বলেন, ‘সবাই খুব ভেলো আচরণ করছেন। আমার তো খুবই ভালো লাগছে। খাতাপত্র কোথায় কোথায় নিয়ে যেতে হবে সেগুলো আজ বুঝে নিলাম। পাশাপাশি কিছু নাস্তা-পানি নিয়ে যাওয়া আসার কাজ করেছি।’

তিনি আরও বলেন, কখনও খেয়ে কখনও না খেয়েই দিন চলে গেছে। এখন চাকরি পেয়ে কতোটা ভালো লাগছে সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। চাকরিতে যে আমি আছি, আসলেই এটি সত্যি, না স্বপ্ন দেখছি- তা বুঝতেই পারছি না!

দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা বলেন, আমারা চাই আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা হোক। জনি ও মারুফের চাকরির মাধ্যমে এই প্রথম সরকারি অফিসে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের যাত্রা শুরু হলো। এটি একটি মডেল হিসেবে কাজ হবে। আমার চাই এটি দেখে এখন থেকে সকল অফিস এইভাবে আমাদের যাদের যোগ্যতা আছে সেই অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করুক।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, রাজশাহীতে প্রকৃত তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্যদের শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে তাদের যোগ্যতানুসারে বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। দুজনকে আমার অফিসে মাস্টার রোলে নিয়োগ দিলাম। এটি একটি যুগান্তকারী অধ্যায় হয়ে থাকবে।

পিএনএস/এসআইআর


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন