জমি দখলের চেষ্টা আ.লীগ নেতার ছেলের, ঘর ভাঙচুর

  06-03-2021 08:11PM

পিএনএস ডেস্ক:মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুরে মো: শহিদ খান নামের এক ভ্যানচালকের ঘর ভেঙে দিয়েছে একই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আশ্রাফ খানের ছেলে ফারুক খান। এতে দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হওয়ার অভিযোগ ভ্যানচালক শহিদের। ঘর ভাঙার পরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে সদর থানা পুলিশের একটি দল।

জানা গেছে, মস্তফাপুর এলাকার মৃত আবুল খানের ছেলে মো: শহিদ খান ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল সাত শতাংশ নাল বাড়ি ক্রয় করেন মো: মকবুল হোসেনসহ তার পরিবারের আরো পাঁচ সদস্যের কাছ থেকে। খেয়ে না খেয়ে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে অনেক কষ্ট করে মাথা গোজার ঠাই করার জন্য নানা বাড়ির এলাকার ১৩ লাখ টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেন মো. শহিদ।

জমির মালিক ও আদালত ও থানার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন হামলা মামলার পর আদালতের নির্দেষ থাকায় গত ২৮ ফেব্রয়ারি পুরোনো ঘরটি নির্মাণ করে ঘরে থাকার জন্য উঠতে গেলে মস্তফাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আশ্রাফ আলী খানের ছেলে ফারুক খান ও তার ছোট ভাই আলী আহম্মাদ খান মিলে এলাকার কিছু সন্ত্রাসী নিয়ে ৭৩নং বড় মেহের মৌজায় বি আর এস ৫৪২ খতিয়ানে ৩২৭,৩২৮ দুই দাগের ৭ শতাংশ জমি জোর দখল করার জন্য শহিদের ঘর ভাঙচুর করে।

জানা যায়, গত ১৯৪৬ সালে মহব্বাত নাগারচীর দাদা মৃত জৈইনদ্দিন আরএস ৬৫৮খতিয়ানের ২০৪,২০৫ দাগের দক্ষিণের চৌহদ্দী করে ৮৩ শতাংশ মৃত যুগল নাগারচী এবং মৃত মতি নাগারচী একই খতিয়ানের একই দাগের উত্তরে চৌহদ্দি করে ৮৩ শতাংশ জমি মৃত বরু বিবি কাছ থেকে ক্রয় করে। মূল ১৬৬ শতাংশ ৬৫৮ আর এস খতিয়ানের ২০৪, ২০৫ দাগের সম্পত্তি একই খতিয়ানে ও দাগে দক্ষিণের ৮৩ শতাংশ জমির মধ্যে ৭ শতাংশ জমি চৌহদ্দী করে মহব্বাত, মকবুল, আছমত, ফরহাদ, মুরাদ নাগারচী ও মৃত রুস্তম নাগারচীর স্ত্রী হাসিয়া বেগমসহ ৬ জনের কাছ থেকে দুই বছর আগে ১৩ লাখ টাকা মূল্যে ক্রয় করে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ফারুক খান মৃত বরু বিবির নাতি দাবিদার বেচু নাগারচী কাছ থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে অসহায় ভ্যানচালক শহিদের ৭ শতাংশ জমি জোর দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বেচু নাগারচী কথিত দাদীর সম্পত্তি বিক্রি করেছে চৌহদ্দী দিয়ে একই দাগের উত্তরে মতি নাগারাচীর কাছে। সেখানে দক্ষিণে বেচু নাগারচীর কোনো সম্পত্তির দাবীদার না।

অন্যদিকে জানা যে আরএস পর্চায় বরু বিবির স্বামীর নাম ছিলো সুবল নাগারচি কিন্তু বর্তমান বরু বিবির নাতি দাবিদার বেচু নাগারচি জেলার ডাসার থানার বালীগ্রাম ইউনিয়নের মধ্য ধলুগ্রাম এলাকায় এসএ পর্চায় পিতার নাম বিহারি নাগারচি এবং তার পিতার নাম ও বেচু নাগারচি দাদা গোবিন্দ নাগারাচি।

জমি ক্রেতা শহিদ ডাসার থানার কাজীবাকাই ইউনিয়নের দ. ভাইতালি গ্রামের মৃত আবুল খান ছেলে। বেচু বাগারচী বলেন, আমি ফারুক খানের কাছে যে পাওয়ার দিছি মতি নাগারচি যে জায়গা আর সেটা উত্তরে এবং এখন ফারুকে ক্ষমতা আছে তারা কতো কিছু করবে। আমি কি করতে পারি।

মহব্বত নাগারচী জানান, আমি ও আমরা আমার দাদা মৃত জৈইনদ্দিন নাগারচি সম্পত্তি ওয়ারিশ সূত্রে আমরা ৬ জন মালিক সূত্রে দক্ষিণে চৌহদ্দি দিয়ে শহিদের কাছে ৭ শতাংশ বিক্রি করেছি। তাছাড়া যে বেচু যাকে দাদি বলে তার স্বামীর নাম সুবল নাগারচি আর বেচুর দাদার নাম গোবিন্দ নাগারচি তার বাড়ি ডাসার থানার মধ্য ধলুগ্রাম এলাকায়। সে কিভাবে এই জমির মালিক দাবি করে এবং কিভাবে ফারুক খানকে জমি দেয়। আর খান ক্ষমতা দেখিয়ে জোর খাটিয়ে শহিদের জমি দখল করতে চায়।

ভ্যানচালক শহিদ খান কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি খুবই অসহায়, আমি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগকে ব্যক্তিগতভাবে ভালোবাসি ও সমর্থন করি কিন্ত সেই দল ও বাবা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় ক্ষমতা দাপটে মিথ্যা কাগজের কথা বলে আমাকে বিভিন্ন অত্যাচার করছে। আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তি জোর করে দখল করতে চাচ্ছে। আমার অনেক কষ্ঠের নির্মাণ করা ঘর বার বার ভেঙে দিচ্ছে। আমি অনেকের কাছে গিয়েছি কিন্তু সঠিক বিচার তারা করলেও ক্ষমতার দাপটে কোনো বিচারই সে মানে না। তাই আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই। আমি এ ব্যাপারে সদর থানায় একটি জিডি করেছি। এছাড়া শনিবার আবারো জমি দখলের জন্য সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে জমির উপর একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখে যায়। আমি খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি।

এ ব্যাপারে ফারুক খান বলেন, আমার ক্রয় করা জমি। আমি ওই জমিতে বালু ফেলেছি। আমি আদালতের রায় পেয়েছি। আমার জায়গায় অন্য মানুষ ঘর তুলছে বিধায় আমি ভেঙে দিয়েছি।

মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ফারুক খানের বাবা হাজী মো. অশ্রাফ খান বলেন, ওই জমি নিয়ে মামলা চলমান আছে। মামলা থাকায় কোনো পক্ষ জমিতে ঘর তুলতে পারবে না। অথচ শহিদ সেই জমিতে ঘর তুলেছে। তাই আমার ছেলেরা গিয়ে ঘর ভেঙে দিয়েছে।

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম মিঞা জানান, বিষয়টা তো জমিজমা সংক্রান্ত। তারপরেও আমি খোঁজ নিয়ে দেখতাছি।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন