শেরপুরে স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা!

  17-04-2021 03:41PM

পিএনএস ডেস্ক : শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরে শালফা বিএম স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তার (৪৫) মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে। যদিও এই শিক্ষকের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগ লেখা হয়েছে। কিন্তু নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারপিটে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি প্রভাবশালীদের চাপে আইনের আশ্রয় না নিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহতের পরিবার লাশ দাফন করতে বাধ্য হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৬এপ্রিল) ভোররাতে বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিহত শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের মাগুরাতাইড় গ্রামের লোকমান হোসেন মন্ডলে ছেলে।

নিহতের স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বিগত ৩এপ্রিল সকালের দিকে উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের মাগুরাতাইর গ্রামে অবস্থিত বাজারের একটি চা-স্টলে আসন্ন খামারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ছয় নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে দুই প্রার্থী মাজেদুর রহমান মিলন ও বর্তমান মেম্বার এনামুল হক রানার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বাকবিত-া শুরু হয়। এমনকি তা দু’পক্ষের মধ্যে মারামারিতে রুপ নেয়। একপর্যায়ে রানা মেম্বারের কর্মী-সমর্থক বলে দাবি করা শহিদুল ইসলাম, তার ছেলে আবু রায়হান ও গ্রামের বাসিন্দা আলী আজমসহ বেশকয়েকজন ব্যক্তি আরেক মেম্বার প্রার্থী মিলনের কর্মী স্কুল শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাকে বেধড়ক মারপিট করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় উদ্ধার করে তাঁকে প্রথমে বগুড়ার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর বিগত ৭এপ্রিল সেখান থেকে বগুড়ায় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে তাকে ভর্তি করা হয়। এরইমধ্যে শুক্রবার (১৬এপ্রিল) দিনগত রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এই স্কুল শিক্ষককে। আর সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোররাতে মারা যান তিনি। পরবর্তীতে সবকিছু গোপন রেখে নিহতের লাশ শজিমেক হাসপাতাল থেকে মাগুরাইড় গ্রামে এনে তরিঘরি করে দাফন করা হয়। এক্ষেতে নিহতের লাশের ময়না তদন্তও করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, রানা মেম্বারের পক্ষের লোকজন এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। তাই অন্যায়-অবিচার করলেও কেউ প্রতিবাদ করেন না। যার কারণেই দিনের বেলায় প্রকাশ্যে ওই স্কুল শিক্ষককে মারপিট এবং মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের পরিবার আইনের আশ্রয় নিতে সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি থানায় কোনো লিখিত অভিযোগও করেননি বলে দাবি করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিহতের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমার স্বামীকে মারধর করা হয়। এরপর থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এছাড়া নানা জটিল রোগেও ভুগছিলেন। একপর্যায়ে হাসপাতালেই মারা গেছেন। তাই আমার কোনো অভিযোগ নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর আবার তাঁর লাশ কাটা হউক আমি তা চাই না। এসব বলে হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠেন তিনি।

এদিকে ঘটনাটি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে শহিদুল ইসলাম ও তার ছেলে আবু রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্তা দেখিয়ে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তারা। শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, বিগত এক সপ্তাহ আগে ওই স্কুল শিক্ষককে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লে বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন এমন একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তাঁদের কোনো অভিযোগ নেই। এক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পিএনএস/এসআইআর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন