বাঁশখালীর ঘটনায় তদন্ত কমিটি

  17-04-2021 11:09PM

পিএনএস ডেস্ক : চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলমের মালিকানাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে পুলিশ। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় এ তদন্ত কমিটি করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন খান। তিনি বলেন, অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাশেন ও ক্রাইম) জাকির হোসেন খানকে প্রধান করে রেঞ্জ অফিসের পুলিশ সুপার নেছার উদ্দীন ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত এসপি কবির হোসনকে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এরআগে আজ শনিবার সকালে বিভিন্ন দাবি পূরণ না করার জেরে শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে পাঁচজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তিন পুলিশসহ আহত হয়েছে আহত হয়েছে ২৩ শ্রমিক। আর আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ আহত ১১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

চমেক হাসপাতালে সাইদুল আসলাম হৃদয়, মোহাম্মদ আশিক ও মোহাম্মদ আরিফসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানিয়েছেন তাদের ১২ দফা দাবিগুলো। তা হলো, ১. ১০ তারিখ বেতন দিতে হবে। ২. পানি ও বাথরুম ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। ৩. রমজান মাসে ৮ ঘন্টা করে ডিউটি করাতে হবে, কেননা ১০ ঘণ্টা ডিউটি করলে ইফতারের সময় পাওয়া যায়না। ৪. শুক্রবার অর্ধ কর্ম দিবস দিতে হবে, জুমার নামাজ পড়া ও বিশ্রামের সুযোগের জন্য। ৫. ঈদের বোনাস ৫০ % দিতে হবে। ৬. কোন শ্রমিক কাটিংয়ের (ছাঁটায়ের) ১ মাস আগে বলতে হবে এবং ছাঁটাইয়ের পর তার পাওনা বেতন দিতে হবে। যখন তখন হুট করেই ছাঁটাই করা যাবে না। ৭. অগ্নিকাণ্ডে কোন শ্রমিকের ক্ষতি হলে সম্পূর্ণ খরচ বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। ৮. স্কেল অনুসারে শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে। ৯. ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও শ্রমিকরা বীমা ভাতা পাননা। তাই ইন্সুরেন্স সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ১০. কোন চাইনিজ বাঙ্গালি শ্রমিকদের গায়ে হাত দিতে পারবে না। ১১. সকাল ৭ টা থেকে ডিউটি দিতে হবে এবং ১২. সকল দাবি পূরণ হলে ডিউটিতে যোগ দেয়া।

বেসরকারি খাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশের মালিকানায় আছে এস আলম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের মধ্যে চীনের সেপকো থ্রি ২০ শতাংশ এবং চীনের অপর প্রতিষ্ঠান এইচটিজি ১০ শতাংশ। চুক্তিতে ৪৫ মাসের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পিডিবি ২৫ বছর ধরে এই কেন্দ্রে উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ কিনবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৬ টাকা ৬০ পয়সার মতো।

এস আলম সহ চীন দুই প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পের মালিক হলেও নির্মাণাধীন প্রকল্পে শ্রমিক সরবরাহের কাজ করে মূলত বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

এগুলো হলো, মাহি এন্টারপ্রাইজ, এনআরএম এন্টারপ্রাইজ, রকিব এন্টারপ্রাইজ, আলী এন্টারপ্রাইজ, আদিবা এন্টারপ্রাইজ, ইমা এন্টারপ্রাইজ, উজ্জ্বল এন্টারপ্রাইজ। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৭ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। তবে বেশিরভাগ শ্রমিক সরবরাহ করছে মাহি এন্টারপ্রাইজ। প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ থেকে ঘণ্টা প্রতি ১৩০ টাকা করে নেওয়া হলেও তাদের থেকে ১০ টাকা করে রেখে দিয়ে ১২০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছিল। এনিয়েও ক্ষোভ ছিল আন্দোলনরত শ্রমিকদের মাঝে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন