পারাপারে একমাত্র ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো

  17-06-2021 07:25PM

পিএনএস, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : ২১ বছরেরও ঞয়নি সেতু। ২ উপজেলার লাখো মানুষের কপোতাক্ষ নদ পারাপারে একমাত্র ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো। আবার সাঁকোটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সাঁকো পার হতে গেলে কাঁপে থর থর করে। সাঁকো দোলায় বুক কাঁপে ধুকধুক করে। সাঁকো পারাপারে কখন বাঁশ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে এ আশঙ্কা। তবে এ অঞ্চলের মানুষের আশা একদিন এখানে একটি ব্রিজ হবে।

খুলনার কপিলমুনি ও তালা উপজেলার সীমান্তে কানাইদিয়ায় কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো দু’পারের হাজারও মানুষের পারাপারের একমাত্র অবলম্বন। দুই উপজেলার ২ জন সংসদ সদস্যের কাছে কপিলমুনি-কানাইদিয়া এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি এখানে একটা ব্রিজ নির্মাণে জনভোগান্তি লাঘবে। পাইকগাছা ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সীমান্ত এলাকার নাম কপিলমুনি ও কানাইদিয়া। এ সীমান্তে অবস্থিত কপোতাক্ষ নদের উপর প্রায় ৮ বছর আগে দু’পারের লোকেরা যৌথভাবে বাঁশ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করেন। নদটি প্রবহমান থাকাকালে এখানে ছিলো নৌকায় পারাপারে খেয়া। পরে কপোতাক্ষ নদ ভরাট হওয়ায় নৌ চলাচল এক সময় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে সরকার কপোতাক্ষ নদ খনন করে। ফলে নদে আবার জোয়ার ভাটা শুরু হয়। দু’পারের লোকদের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. নূরুল হক কপিলমুনি বাজারের উপর দিয়ে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৩টি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরালো করার জন্য খুলনা-সাতক্ষীরা বাইপাস সড়ক সংযোগ অর্থাৎ কপোতাক্ষ নদের উপর কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু নির্মাণের দাবিটি ছিল কয়েক যুগ পূর্বের। সেই দাবির প্রেক্ষিতে সরকার সেতু নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যয় ধার্য্য করে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার ৯শ’ ১৯ টাকা ৫৫ পয়সা। কাজের মান উন্নয়নের জন্য পরবর্তীতে বাজেট বাড়িয়ে সেটি করা হয় ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এন হক এসোসিয়েট নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালে সেতু নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭২২ টাকা আইএফআইসি ব্যাংক খুলনা হতে উত্তোলন করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। যা নিয়ে খুলনা মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা হয়। ফলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা জটিলতাসহ নানান কারনে সেতু নির্মাণ কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সেতুটির বাকি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে ইসলাম গ্রুপের নামের আরেকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কপোতাক্ষ নদের স্রোতে বাঁধা পাবে মর্মে একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। এরপর সেতু নির্মাণ কাজ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খুলনা সাতক্ষীরা বাইপাস কপিলমুনি-কানাইদিয়া সড়ক সংযোগ সেতু নির্মাণ কাজ দীর্ঘ ২১ বছরেও শেষ হয়নি। বৃহত্তর এ জনবহুল এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে সেতু নির্মাণ বন্ধ হলে নদের বুকে থেকে যায় ১৮টি পিলার। আর এই আংশিক কাজ শেষ হওয়া পিলারে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ’ হয়ে পলি জমে কপোতাক্ষের নাব্যতা হ্রাস পায়। মৃত প্রায় কপোতাক্ষ নদকে পুনর্জীবিত করতে কপোতাক্ষ পাড়ের দু’জনপদের মানুষ নদ খননের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে ২০১১ সালে কপোতাক্ষ নদ খননে প্রায় ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। তারপরও খেয়াঘাট যথারীতি চালু রেখে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করছে। তালা উপজেলার জালালপুর ও খেশরা ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের হাজার হাজার লোক এ সাঁকো দিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যবসা ও কাজের জন্য পাইকগাছা বাণিজ্যিক উপশহর কপিলমুনি ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হয়। উপজেলার কপিলমুনি ও হরিঢালী ইউনিয়নের লোক পারাপারের কারনে বর্তমান সাঁকোটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য তালা-কলোরোয়া ও পাইকগাছা-কয়রার সংসদ সদস্যের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। খুলনা জেলার পাইকগাছার অন্যতম বাণিজ্যিক শহর বলা হয় কপিলমুনি বিনোদগঞ্জ কে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারী কাঁচা মালামাল বেচাকেনা করতে দেখা যায়। যা দেশ বিদেশে রপ্তানি করা হয় বলে জানা গেছে। এ কারনে এর আরও গুরুত্ব বহন করছে। কানাইদিয়া এলাকার কয়েক জন ব্যবসায়ী জানান, সেতু নির্মাণ হলে খুলনার পাইকগাছা হতে সাতক্ষীরার দূরত্ব কমে যেত। যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নসহ বাণিজ্যিক সুবিধা লাভ করতো এলাকার অসংখ্য মানুষ। এ ব্যাপারে কপিলমুনি ইউপি চেয়াম্যান মো. কওছার আলী জোয়াদ্দার জানান, এ খেয়াঘাটটি খুবই ব্যস্ততম একটা ঘাট। দু’পারের লোকদের যাতায়তের জন্য কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রিজ নির্মাণের কোনো বিকল্প হতে পারে না। এ ব্যাপারে তালা উপজেলার জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, উপজেলা বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষের নদ পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়। ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এখানে ব্রিজ নির্মাণ জরুরি। কয়েকবার জরিপও হয়েছে। কিন্তু কার্যকর হয়নি। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত কপিলমুনি-কানাইদিয়া কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানান।

পিএনএস/এসআইআর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন