শিশু ধর্ষণ রোধ করা যাচ্ছে না

  28-10-2016 01:31AM


পিএনএস: কঠোর আইন ও সচেতনতা বৃদ্ধির নানা প্রয়াস সত্ত্বেও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিশুরা। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। শিশু নির্যাতনের মামলাগুলোর দ্রুত বিচার করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে এ ধরনের ঘটনা হ্রাস পেত বলে মনে করছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।

অতি সমপ্রতি দিনাজপুর জেলার পাবর্তীপুর উপজেলার জমিরহাট তাকিয়াপাড়া গ্রামে পাঁচ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশের মানুষের বিবেক নাড়িয়ে দিয়েছে। শিশুটিকে ১৮ ঘণ্টা আটকে ধর্ষণতো করেছেই, এর পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছে ধর্ষণকারীরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন শিশুটি শারীরিক ও মানসিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

১০টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার লঙ্ঘনের সংবাদ পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করে তৈরি বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৩২৫টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এই ৩২৫ শিশুর মধ্যে ৪৮ জন শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, ৩১ জন প্রতিবন্ধী বা বিশেষ শিশু, ৫ জন গৃহকর্মী শিশু। এদের মধ্যে ১৫ জন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৫৪ শিশুকে। অর্থাত্ প্রতিমাসে গড়ে ৩৫ শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। যা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে উত্কণ্ঠা প্রকাশ করেছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।

২০১৫ সালে ৫২১ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে যাদের মধ্যে ৯৯ শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়, ৩০ শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় এবং ৪ জন শিশু ধর্ষণের অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। ২০১৪ তে ১৯৯টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে যাদের মধ্যে ২২টি শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, ২১টি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ২৩টি শিশু ধর্ষণের অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। ২০১৩ এবং ২০১২ সালে যথাক্রমে ১৭০ এবং ৮৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।

পরিসংখ্যান বলছে: ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১৩০১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৬৯ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৯৩ জন, ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে ৩২ জন শিশু এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেছে ১৬৫ জন শিশুকে।

এ সময়ে যত শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে তাদের অধিকাংশের বয়স ৫ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। এসব শিশুদের কখনো চকলেট, খেলনা বা কোনো সৌখিন জিনিস দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে ধর্ষণকারীরা। ১৩ থেকে ১৮ বছরের শিশুদের ধর্ষণ করা হচ্ছে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে, জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্জন স্থানে বা বাড়িতে একা পেয়ে।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুছ শহীদ মাহমুদ বলেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণ মূলত নির্যাতন করার পরও আইনের আওতায় আসছে না অপরাধী। ফলে একের পর এক শিশু ধর্ষণের মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটছে। আইন থাকলেও তা উপেক্ষিত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত মামলা হলে যে চার্জশিট দেওয়া হয় তাতে আইনের ফাঁক-ফোকর থাকে। নির্যাতিত শিশু দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত আর অপরাধী ক্ষমতাবান প্রভাবশালী হওয়ার ফলে মামলা গতি হারায়। শিশুর পক্ষে সাক্ষী-সাবুদ পাওয়া যায় না। দরিদ্র অভিভাবক অনেক সময় অল্প টাকায় আসামির সাথে আপস করে মামলা তুলে নেয়। অনেকে আবার ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলেও, সম্মান খোয়ানোর ভয়ে মামলা করে না। আবার মামলা করলেও আসামি পক্ষের আইনজীবীর নোংরা জেরা এবং দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলানোর কারণে বাদী পক্ষের মামলা চালিয়ে নেওয়াও সম্ভব হয় না। ফলে সমাজে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, দিনাজপুরের নির্যাতনের শিকার শিশুর ন্যায় বিচারপ্রাপ্তি, সুচিকিত্সা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ হতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে সবার মানসিকতা গড়ে উঠেনি। নেই বিচার প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে জবাবদিহি। তিনি বলেন, দু:খজনক বিষয় হলো, মামলা দায়েরের ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও, সেটা কোনোদিনই হয়নি। এছাড়া ভিকটিমের মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রদানের সময়ও গাফিলতির ঘটনা ঘটে। প্রায়ই দেখা যায় ভিকটিম দুর্বল আর আসামিপক্ষ শক্তিশালী, এ প্রেক্ষিতে অনেক সময় মামলা ধামাচাপা দিতেও দেখা যায়।

পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন