হবু মায়ের যত্ন

  27-11-2016 09:36PM

পিএনএস: গর্ভকালীন সময় চারপাশের পরিবেশ প্রভাবিত করে হবু মাকে। তাই এই সময়টা একজন মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে জন্ম দেওয়ার জন্য মাকে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ কঠিন সময়। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে দরকার মানসিক সুস্থতাও।

গর্ভের শিশুকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি ডাক্তারের দেওয়া নিয়ম মেনে চলাও জরুরি।

একজন নারী যখন সন্তান ধারণ করার কথা চিন্তা করেন, তখন থেকেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভেবে নিতে হবে তাকে। মায়ের যদি কোনও বড় অসুখ থাকে তাহলে প্রথমেই সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় সব ধরনের ওষুধ সেবন করা যায় না। কিছু কিছু ওষুধ সেবন করলে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।

গর্ভধারণের পর খাওয়া-দাওয়ার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। এ সময় মায়ের খাওয়ার রুচি কমে যায়। কিন্তু মনে রখা চাই যে প্রয়োজনের তুলনায় কম খেলে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। দিনে দুই-তিন লিটার পর্যন্ত পানি পান করা উচিত। পুষ্টিকর শাক-সবজি ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। শীতকালে নানা রকম সতেজ শাকসবজি পাওয়া যায়। তাই এ সময় গর্ভবতী মায়েরা শাকসবজি একটু বেশি করে খাবেন। এগুলো ছাড়াও ফলমূল খেতে হবে। খুব বেশি ঠাণ্ডা খাবার না খাওয়াই ভালো।

টাঙ্গাইল হেলথ কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন শার্লী হামিদ বলেন, গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এটা ক্ষণস্থায়ী। তাই চিন্তার কিছু নেই। প্রয়োজনে মায়ের বর্তমান শারীরিক অবস্থার কথা ডাক্তারকে জানিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন। তবে ভারি কাজ যেমন ঘর মোছা ও কাপড় ধোয়া থেকে বিরত থাকুন। একজন গর্ভবতী মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। দুপুরে ২ ঘণ্টা ও রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমালে ভালো হয়। মায়ের যদি বিশ্রাম কম হয় এবং মা যদি ক্লান্ত হয়ে পড়েন তবে তা গর্ভে থাকা শিশুর উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

শারীরিক পরিবর্তনের কারণে এ সময় গর্ভবতী মায়েদের একটু বেশি গরম অনুভূত হতে পারে। তাই এ সময় আরামদায়ক এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত। গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে চারবার ডাক্তার দেখাতে হবে। ১২ সপ্তাহে একবার, ২৮ সপ্তাহে একবার, ৩২ সপ্তাহে একবার এবং ৩৬ সপ্তাহে একবার। এছাড়া যেকোনও ধরনের সমস্যা হওয়া মাত্র ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রথম তিন মাসে রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। কারোর যদি আগে থেকেই প্রেসার বা ডায়াবেটিস থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করা জরুরি।

ভারি কিছু বহন করা যাবে না। টিটেনাসের ইনজেকশন দেওয়া না থাকলে গর্ভবতী মাকে অবশ্যই টিটেনাসের ইনজেকশন দিতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের আরেকটি মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে খিঁচুনি। গর্ভাবস্থায় প্রেসার বেড়ে গিয়ে এ সমস্যা হয়। প্রেসার থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ সমস্যাটি শীতকালে বেশি হয়। তাই ডাক্তারের উপদেশ ভালোভাবে মানতে হবে। গর্ভাবস্থায় প্রথম এবং শেষ দিকে খুব দীর্ঘ ভ্রমণ করা নিরাপদ নয়।

এ সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা খুব বেশি জরুরি। প্রতিদিন গোসলের সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। অ্যাজমা বা অ্যালার্জি থাকলে ঠাণ্ডা পানি এড়িয়ে চলুন। গর্ভকালীন অবস্থায় সব ধরনের ওষুধ খাওয়া যায় না। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না। গর্ভাবস্থায় ত্বকে ফাটা দাগ পড়তে পারে। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সন্তান প্রসবের পর আবার তা ঠিক হয়ে যায়।

সর্বোপরি সুস্থ সন্তানের জন্য হবু মাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে থাকতে হবে সুস্থ।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন