স্বপ্ন দেখছেন জুলেখা

  29-09-2016 06:27AM

পিএনএস: ব্ল্যাক বেঙ্গল। উন্নত জাতের ছাগলের নাম। এই ছাগল পালনে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ সিংগিমারী তেলী পাড়া গ্রামের স্বামীহারা জুলেখা বেগম এখন ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। তিনি স্বল্প সময়ে এলাকায় ব্যক্তিক্রমী উদাহরণ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। তার ব্যক্তিক্রমী উদাহরণ ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে। অনেকে সচ্ছল পরিবারগুলোতে ছাগল পালন দেখে তারাও পৃথক পৃথক ভাবে ছাগলের খামার করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সরজমিন দেখা গেছে, ঐ গ্রামে মৃত দিনমজুর তোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু শেখের ২য় স্ত্রী জুলেখা বেগম। জায়গা জমিন সহায় সম্বল কিছুই ছিল না বাচ্চু শেখের। প্রথম স্ত্রী জোবেদা বেগমের ঘরে ৪ ছেলে ও ২য় স্ত্রী জুলেখা বেগমের ঘরে ১ ছেলে ১ মেয়ে রেখে ১৯৮৫ সালে মৃত্যু বরণ করেন। এ সময় প্রথম স্ত্রী পাশেই নিকটবর্তী বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। কিন্তু এতে তার জীবিকা নির্বাহে নেমে আসে সীমাহীন দুর্ভোগ। তখন তৎকালীন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আফতাব হোসেন। জুলেখাকে দুইশত টাকায় মাসিক ভাতায় অস্থায়ীভাবে অফিস ঝাড়ুদার পদে নিয়োগ দেন। নিয়মিত সকালে অফিস ঝাড়ু দেন এরই ফাঁকে পাশাপাশি অপর এক ব্যাংক কর্মচারীর বাসায় ঝি’র কাজ করেন। সেখানে দু’বেলা খেয়ে ৩ শত টাকা মাসিক ভাতা পান। এরই মাঝে ইউপি চেয়ারম্যান একখানা বিধবা ভাতা কাড দেন। সব মিলে জুলেখার সংসার চলে। এমতাবস্থায় একদিন জনৈক হোটেল ব্যবসায়ী আঃ রশিদ জুলেখাকে ছাগল পালনের পরামর্শ দেন। যদিও রশিদ হোটেল ব্যবসায়ী সেদিকে না ভেবে জুলেখা তার পরামর্শ মতে ৭৫০ টাকা দিয়ে দুটি ছাগল ক্রয় করেন। সে থেকে ছাগল পালনের যাত্রা শুরু হয়। পরে শিশু ছেলে ও মেয়ের মতে ছাগলও লালন পালন করতে থাকেন জুলেখা। এরপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি জুলেখাকে। পর্যায়ক্রমে তার উপার্জিত অর্থ জমিয়ে মেয়ে আঞ্জুমানাকে পাত্রস্থ করেন। আর ছেলেসহ জোরেশোরে ছাগল পালনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ফলে বেড়ে যায় সংসারের আয়। প্রতিদিন সকালে খেয়ে না খেয়ে যেভাবেই থাকুক না কেন তার শিশু ছেলে আর ছাগল নিয়ে বেরিয়ে পরে চলে যান উপজেলা পরিষদ মাঠে। ছাগল আর ছেলেকে মাঠে রেখে মৎস্য অফিসে ঝাড়ু দেন এবং পরে ব্যাংক কর্মকর্তা বাসায় ঝি’র কাজ করেন। এভাবেই সংসার চলতো জুলেখার। জুলেখা জানান, স্বামীর অবর্তমানে অসহায় জীবনে শতকষ্ট আর দুঃখ সহ্য করে আসছি, এখন আল্লাহ ফিরে দেখেছে, তাই ৪ শতাংশ জমি খরিদ করে থাকার জন্য বাসা বেঁধেছি। এখন ইনশাহআল্লাহ কেটে গেছে সেই অসহনীয় কষ্ট।
ছাগল পেলে ইতিমধ্যে অসংখ্য ছাগল বিক্রি করেও মেয়ে পাত্রস্থ, জমিন ক্রয় করার পরও এখনো ১৬টি ছাগল রয়েছে। জুলেখা আরো জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ এভাবেই নিজ উদ্যোগে ছাগল পালন করে আসছি। দুঃখের বিষয় স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কোনোরূপ সহযোগিতা করেন নি। সরকারি সাহায্যে ও সহযোগিতা পেলে আরও আগেই সফল হতাম।

পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন